চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমনুরা টংপাড়া গ্রামে ২০০ বছর ধরে বসবাস করা আদিবাসীদের উচ্ছেদে ফের নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে ভূমিদস্যু তরিকুল ইসলাম ওরফে টি ইসলাম।
আদিবাসীদের অভিযোগ- গ্রাম থেকে অর্ধশতাধিক পরিবারকে উচ্ছেদ করতেই ফের নির্যাতন শুরু করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভূমিদস্যু টি ইসলাম।
টি ইসলাম ও তার অনুসারীরা আদিবাসী গ্রামের বসতভিটা, পুকুর ও মন্দিরের জায়গা-জমির জাল দলিল তৈরি করে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। আর নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের নামে দেয়া হয় মিথ্যা মামলা।
গ্রামের ৯০ বছর বয়সী কুটিয়া রাজোয়াড় অভিযোগ করেন- ২০১৩ সালের দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নামো শংকরবাটি গ্রামের মৃত তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে তরিকুল ইসলাম কিছু ভূয়া কাগজপত্র নিয়ে এসে গ্রামবাসীকে বলে ৭ দিনের মধ্যে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে। এরপর থেকেই গ্রামবাসীর উপর হামলা, লুট ও নির্যাতন চালিয়ে আসছে তরিকুল ইসলামের সন্ত্রাসী বাহীনি।
কুটিয়া রাজোয়াড় আরও অভিযোগ করেন, তরিকুল ইসলামের অব্যাহত নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে থানায় গেলে পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং আমনুরা ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা তরিকুল ইসলামকে সহযোগীতা করছে।
আদিবাসীদের অভিযোগ- গত ২৩ শে মে তরিকুল ইসলামের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা গ্রামের কাঞ্চন রাজোয়াড়কে অপহরণ করার চেষ্টা করে। ২২ শে জুন গ্রামের একটি ঘর ভাংচুর করে ওই দিন নিমচন্দ্র রাজোয়াড়কে বাড়ীঘর ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এ সময় নারীসহ কয়েকজনকে মারধর করে শ্লীলতাহানি করে।
গত ২৫ শে জুন আদিবাসী নেতা বিশ্বনাথ মাহাতো ও বঙ্গপাল সরদারকে রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করে তরিকুল ইসলামের সন্ত্রাসী বাহিনী। গত ১৬ জুলাই আদিবাসীদেরকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে গেছে এই সন্ত্রাসী বাহিনী। এতে করে চরম নিরাপত্তহীনতার মধ্যে বসবাস করছে আদিবাসীরা।
আদিবাসীদেরকে রক্ষা করতে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসায় আদিবাসীসহ বিভিন্ন সংগঠনের লোকজনের বিরম্নদ্ধে ১৭টি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে তরিকুল ইসলাম। অথচ আদিবাসীদেরকে মারধরের ঘটনায় থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ করেনি।
এমন অবস্থায় শনিবার (১৮ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে টংপাড়া গ্রামের আদিবাসীরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। করুনা রাজোয়াড় এর সভাপতিতেব প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়, উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি হিংগু মুরমু, সাবেক ইউপি সদস্য কর্ণেলিয়াস মুর্মু, আদিবাসী মুক্তি মোর্চার বিশ্বনাথ মাহাতো, রাজা নিরেন খালকো, রাজা বাবুলাল তির্কী, এভারেষ্ট হেমব্রম, বঙ্গপাল সরদার, গনেশ মার্ডি, বাসদ নেতা জয়নাল আবেদীন, মাঝারম্নল ইসলাম প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, ভুমিদস্যু তরিকুল ইসলাম বরেন্দ্র অঞ্চলে বিভিন্ন এলাকায় আদিবাসীদের বসবাসের ভিটার জাল দলিল তৈরি করে আদিবাসীদেরকে উচ্ছেদ এর চেষ্টা করছে। এই ভূমিদস্যু আদিবাসী এলাকায় মসজিদ বানানোর কথা বলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরির চেষ্টা করছে।
এই তরিকুল ইসলামের বাহিনীর সদস্যরা সাংবাদিকসহ আদিবাসীদের উপরে হামলা চালিয়েছে। অবিলম্বে তরিকুল ইসলামসহ সন্ত্রাসীদেরকে আটক করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি করেন তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার আমনুরা ফাঁড়ির ইনচার্জ সলেমান বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে সেজন্য পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পুকুরে উভয় পক্ষকে নামতে নিষেধ করা হয়েছে।