অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যতদিন ক্ষমতায় থাকবেন ততদিন বিশ্রামে যাবেন না পাকিস্তানে বিরোধী ১১ দলীয় জোট পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (পিডিএম) নেতারা। বুধবার খাইবার-পখতুনখাওয়া প্রদেশের মারদানে সরকারবিরোধী র্যালিতে এমন মন্তব্য করেছেন তারা। এর মধ্য দিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন দ্বিতীয় দফা শুরু হয়েছে বলে তারা ঘোষণা করেন। এ খবর দিয়েছে পাকিস্তানের অনলাইন এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। এতে আরো বলা হয়, এই সমাবেশ থেকে নেতারা ইমরান খানকে অপ্রস্তুত সরকার বলে ব্যঙ্গ করেন। তারা বলেন, ক্ষমতাসীন পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অপ্রস্তুত নয় বিরোধীরা। শিগগিরই রাজধানী ইসলামাবাদমুখী লংমার্চ হবে এবং তাতে ব্যাপক আকারে অংশগ্রহণ করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান পিডিএম নেতারা। তারা ঘোষণা করেন, সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এই আন্দোলন বন্ধ হবে না।
খাইবার-পখতুনখাওয়া প্রদেশের স্বাবী-মারদান-গাজুখান রোড থেকে সরকার বিরোধী এই র্যালি শুরু হয়। এতে অংশ নেন পিডিএম নেতারা। বিক্ষোভ গিয়ে শেষ হয় মারদানে কলেজ চকে। সেখানে প্রধান সড়কে সমাবেশ করেন তারা। এতে পিডিএমের সভাপতি এবং জামায়াতে ইসলাম-ফজলের (জেইউআই) প্রধান মাওলানা ফজলুর রেহমান বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, শিগগিরই আমরা বর্তমান সরকারের কবল থেকে মুক্তি পাব। ইসলামাবাদের লং মার্চের জন্য আমাদেরকে প্রস্তুত হতে হবে। এর আগে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, যদি ৩১ শে জানুয়ারির মধ্যে সরকার পদত্যাগ না করে, তাহলে ফেব্রুয়ারিতে রাজধানী ইসলামাবাদমুখী লংমার্চ করবে পিডিএম। এর মধ্য দিয়ে তিনি রাজধানীতে অবস্থান ধর্মঘটের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারকে ক্ষমতা থেকে না সরানো পর্যন্ত আমরা বিরত হবো না। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার অবৈধ। আর ইমরান খান হলেন অযোগ্য শাসক। তিনি আরো বলেন, সরকার এতটাই অযোগ্য যে, তারা কর্মসংস্থান ও গৃহায়ণ ইস্যুতে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারবে না।
মাওলানা ফজল বলেন, পাকিস্তানের অর্থনীতি এখন ফাঁকা। আমাদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ চীন এবং সৌদি আরব। উচ্চ হারে সুদে চীনের কাছ থেকে অর্থ ধার করে সরকার সৌদি আরবকে ঋণ ফেরত দিয়েছে। পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ একই রকম বক্তব্য উপস্থাপন করেন। পিডিএমের র্যালিতে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতির জন্য তিনি মারদানের জনগণকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, অযোগ্য সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ বেরিয়ে এসেছে। ইমরান খান নিজে স্বীকার করেছেন, প্রস্তুতি ছাড়া তার সরকারে আসা উচিত নয়। মরিয়ম নওয়াজ প্রশ্ন রাখেন, ইমরান যেহেতু অপ্রস্তুত তখন শেরওয়ানি পরতে কেন তিনি এত উদগ্রীব ছিলেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি পাকিস্তানের অফিসিয়াল ড্রেস কোডকে ইঙ্গিত করেছেন। মরিয়ম আরো বলেন, ইমরান খান জানেন না কিভাবে সরকার চালাতে হয়। কিন্তু তিনি জানেন কিভাবে ‘অনুগত’ হতে হয়। ইমরান খানের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করবেন। কিন্তু আপনি সেইসব বিদেশীকে কাজ দিতে পুরোমাত্রায় প্রস্তুত আছেন, যারা আপনাকে অর্থ দিয়েছে। আপনি ন্যায়বিচারের জন্য প্রস্তুত নন। এ সময় দেশের অর্থনীতির ভয়াবহতার কথা তুলে ধরেন মরিয়ম।
বক্তব্য রাখেন জমিয়তুল উলেমায়ে পাকিস্তান (জেইউপি)-এর প্রধান শাহ আওয়াইজ আহমেদ নুরানি। তিনি বলেন, মারদানের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ‘সিলেক্টেড’ প্রধামন্ত্রীকে ৩১ শে জানুয়ারির মধ্যে বিদায় নিতে হবে। যদি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ না করেন, তাহলে জনগণ তাকে লাথি মেরে ক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে দেবে।
এর আগে পিডিএম সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ৩১ শে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাদেশিক এবং জাতীয় পরিষদের সংশ্লিষ্ট সব দলের সদস্যরা স্ব স্ব দলীয় প্রধানের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। এর মধ্য দিয়ে একযোগে পদত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পদত্যাগের চাপে ফেলবেন। কিন্তু ইমরান খান তাদের সেই প্রস্তুতিতে ভীত নন বলেই মনে হচ্ছে। পিডিএমের এমন হুমকির জবাবে ইমরান বলেছেন, তারা গণপদত্যাগ করলে যেসব আসন শূন্য হবে, সেখানে তিনি উপনির্বাচন দেবেন। তিনি বিরোধীদের আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে শর্ত দিয়েছেন দুর্নীতির মামলা বাদে যেকোনো ইস্যুতে তিনি আলোচনা করতে চান। কিন্তু বিরোধীরা চাইছেন এ বিষয়টিকে আলোচনায় রাখতে। কারণ, দলগুলোর বড় বড় নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা আছে। কেউ কেউ আটক আছেন। কারো বিরুদ্ধে রায় হয়ে গেছে।