অনলাইন ডেস্ক : টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেছে দুদক। আসামিদের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
রোববার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এ দায়ের হওয়া মামলাটি করেছেন সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন। প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রীর বিষয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে এ মামলাটি দায়ের করা হলেও প্রদীপ কুমার দাশের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ নিয়ে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে বলে জানায় দুদক সূত্র।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় বর্তমানে র্যাবের রিমান্ডে আছেন প্রদীপ কুমার দাশ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণ অসৎ উদ্দেশ্যে একে অপরের সহযোগিতায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুদকে দাখিলকৃত সম্পদবিবরণীতে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকা সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেন। তারা সম্পদের মিথ্যা তথ্য দেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওসি প্রদীপ ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার সম্পদ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন।
এতে আরও বলা হয়, প্রদীপ কুমার দাশ কক্সবাজারের মহেশখালী থানায় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় তার এবং স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে। ওই অভিযোগের সূত্র ধরে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এর প্রমাণও মেলে। দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয় ২০১৯ সালের ১১ জুলাই প্রদীপ কুমারের স্ত্রী চুমকি কারণকে সম্পদবিবরণী দাখিলের আদেশ দেয়। একই বছরের ৩০ এপ্রিল দুদক কার্যালয়ে সম্পদবিবরণী দাখিল করেন চুমকি কারণ। তাদের দাখিলকৃত সম্পদবিবরণীতে ৩ কোটি ৬৬ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকা স্থাবর এবং ৪২ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৪ টাকা অস্থাবরসহ মোট ৪ কোটি ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৬৯৪ টাকা সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। দুদক কর্মকর্তা সম্পদবিবরণী যাচাই-বাছাই করে ৪ কোটি ২২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৯ টাকা সম্পদ অর্জনের তথ্য পান। এতে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকা সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করা হয়।
দুদকের কাছে দেয়া সম্পদবিবরণীতে বলা হয়, চুমকি কারণ ২০১৩ সালের ১ আগস্ট দানপত্র দলিলমূলে নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন পাথরঘাটা এলাকায় জমিসহ একটি ছয়তলা বাড়ি তার পিতার কাছ থেকে পেয়েছেন। শ্বশুরের কাছ থেকে প্রদীপের স্ত্রীর উপহার পাওয়া বাড়ি নিয়ে দুদকের তদন্তে দেখা যায়, চুমকি কারণকে তার পিতা একটি বাড়ি দানপত্র করে দিলেও তার অন্য ২ ভাই ও ১ বোনকে কোনো বাড়ি দানপত্র করেননি। এতে প্রতীয়মান হয় যে, ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’র মাধ্যমে অর্জিত আয় গোপন করার উদ্দেশ্যে স্থানান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে তার শ্বশুরের নামে ওই বাড়ি নির্মাণ করে রূপান্তরপূর্বক পরবর্তী সময়ে চুমকি কারণের নামে দানপত্র করে নিয়ে প্রদীপ দাশ ভোগদখল করছেন।
প্রদীপের গৃহিণী স্ত্রী চুমকি কারণ কমিশন ব্যবসায়ী হিসেবে ২০১৩-১৪ সালে প্রথম আয়কর রির্টান দাখিল করেন। পরবর্তী সময়ে মৎস্য ব্যবসায়ী ও বাড়ি ভাড়া থেকে আয় দেখিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দেন। তিনি ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ কর বছরে আয়কর রিটার্নে কমিশন ব্যবসা বাবদ ব্যবসার মূলধন ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং আয় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেখান। তবে দুদক তদন্ত করে দেখে, কমিশন ব্যবসার লাইসেন্স, সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে ব্যবসা করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র, ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বা অন্য কোনো রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে পারেননি।
এছাড়া চুমকি কারণ ২০০২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মৎস্য ব্যবসা করে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা আয়ের কথা বলেন ২০১৪-১৫ সালে প্রদর্শিত আয়কর নথিতে। তিনি আয়ের সপক্ষে জেলার বোয়ালখালীতে ২০০২ সালে ৫টি পুকুর নগদ ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ১০ বছরের জন্য লিজ নেন। এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে, ১ জানুয়ারি ১৯৯৫ সালে সাব ইন্সপেক্টর হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন প্রদীপ কুমার দাশ। ২০০২ সালে চুমকি কারণের কিংবা স্বামী প্রদীপ কুমার দাশের ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিল এমন কোনো তথ্য দুদককে সরবরাহ করতে পারেননি।
মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ‘টেকনাফ থানার সাবেক (বরখাস্ত) ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণ ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে রোববার দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২)/২৭(১), মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। এ মামলার জন্য পরবর্তী সময়ে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেবেন কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর কুঞ্জুরী গ্রামের মৃত হরেন্দ্র লাল দাশের ছেলে প্রদীপ। তার পিতা হরেন্দ্র লাল ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) নিরাপত্তাপ্রহরী। তার দুই সংসারে রয়েছে পাঁচ ছেলে, ছয় মেয়ে। প্রদীপরা তিন ভাই। তিনজনই পুলিশ বিভাগে কর্মরত।