নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা মঙ্গলবার। ভোর ৫:৩০। ২২ জুলাই, ২০২৫।


Girl in a jacket

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও অন্তত ১১৫ ফিলিস্তিনি

জুলাই ২১, ২০২৫ ১:৫৪
Link Copied!

অনলাইন ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় একদিনে আরও অন্তত ১১৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন ত্রাণের আশায় জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত মানুষ।

সর্বশেষ এই হামলা চলতি বছরের মে মাসের পর থেকে ত্রাণপ্রার্থীদের ওপর ইসরায়েলের সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাগুলোর একটি। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব হামলায় আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন।

সোমবার (২১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, উত্তর গাজার জিকিম ক্রসিং এলাকায় অন্তত ৬৭ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত জনতার ওপর হামলা চালালে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। দক্ষিণে আরেকটি বিতরণ কেন্দ্রের কাছে আরও ৬ জন নিহত হন। এর আগের দিন একইভাবে মারা গিয়েছিলেন ৩৬ জন।

গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৯০০ জনের বেশি মানুষ।

আল জাজিরা বলছে, ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আহমেদ হাসুনা। তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে একজন যুবক ছিল। হঠাৎ গ্যাস নিক্ষেপ শুরু হলো। গ্যাসেই আমাদের শেষ করে ফেলছিল। আমরা কোনওমতে পালিয়ে এসে একটু নিশ্বাস নিতে পারলাম।”

আরও পড়ুনঃ  তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ বাংলাদেশের তারকা ফুটবলার

আরেক বাসিন্দা রিজেক বেতার জানান, আহত এক বৃদ্ধকে তিনি সাইকেলে করে সরিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরাই তাকে নিয়ে এসেছি। এখানে অ্যাম্বুলেন্স নেই, খাবার নেই, জীবন নেই, বেঁচে থাকার পথ নেই। আমরা কোনোমতে টিকে আছি। আল্লাহই আমাদের সহায় হোন।”

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজায় প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের ২৫ ট্রাকের একটি ত্রাণবহরে গুলি চালানো হয়। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, “ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত বেসামরিক মানুষের ওপর কোনো ধরনের সহিংসতা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।”

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা “তাৎক্ষণিক হুমকির” জবাবে “সতর্কতামূলক গুলি” ছুড়েছিল, তবে ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ বহর লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়নি। অন্যদিকে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএ জানায়, গাজায় পরিস্থিতি এখন “বিপর্যয়কর”। অনেক শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে এবং অনেকে খাবার পাওয়ার আগেই মারা যাচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  রাসিক সেবায় চরম অচলাবস্থা, অভিযোগ তুলল নাগরিক সমাজ

ওসিএইচএ-র ভাষ্য, “মানুষ জীবন বাজি রেখে খাবার খুঁজছে। এটি একেবারে অমানবিক।”

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস বলেছে, ক্ষুধার্ত নারীদের, শিশুদের এবং পুরুষদের ওপর ইসরায়েলের এ ধরনের ক্রমাগত হামলা নিছক মানবিক বিপর্যয় নয়, বরং এটি একটি গণহত্যা, যা পশ্চিমা বিশ্ব নীরব থেকে সম্ভব করছে।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক নিহাদ আওয়াদ বলেন, “পশ্চিমা সরকারগুলোর অজানা নয়, তারা প্রত্যক্ষভাবে দেখছে কীভাবে মানুষকে না খাইয়ে মারা হচ্ছে, ঘরছাড়া করা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে— তবুও তারা কিছু করছে না।”

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, গাজার কর্মীরা খাবারের জন্য বারবার হতাশায় বার্তা পাঠাচ্ছেন। তিনি জানান, “সবই মানবসৃষ্ট এবং একেবারে দায়মুক্তিতে ঘটছে। কয়েক কিলোমিটার দূরেই খাদ্য মজুদ থাকলেও সেটি পৌঁছাচ্ছে না।”

ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, তাদের কাছে গাজার সীমান্তে এমন পরিমাণ খাদ্য মজুদ রয়েছে যা তিন মাসের জন্য যথেষ্ট, কিন্তু ইসরায়েল ২ মার্চ থেকে তা আটকে রেখেছে।

আরও পড়ুনঃ  আহতদের দেখতে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে মির্জা ফখরুল

গাজার প্যালেস্টিনিয়ান মেডিকেল রিলিফ সোসাইটির পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু আফাশ বলেন, বহু নারী ও শিশু ক্ষুধার কারণে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, “আমরা এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছি। শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।”

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শত শত মানুষ এখন ম্যালনিউট্রিশন ও পানিশূন্যতায় ভুগছেন এবং তারা যেকোনো সময় মারা যেতে পারেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্তত ৭১টি শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে এবং আরও ৬০ হাজার শিশু গুরুতর অপুষ্টির লক্ষণ দেখাচ্ছে। শুধু রোববারেই ক্ষুধার জেরে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।