অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেকেই ছয় দফা দাবি নিয়ে অনেক কথা বলেন। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি যে, এটা বঙ্গবন্ধুর একান্ত চিন্তার ফসল। ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে বুধবার অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে (আইএমএলআই) বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন বিষয়ক জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এতে যুক্ত হন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একমাত্র মোহাম্মদ হানিফই (ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র) জানতেন যে, ছয় দফা আর কারও নয়, বঙ্গবন্ধুর একান্ত চিন্তাধারার ফসল। হানিফ ওই তথ্য ভালোভাবে জানতেন এ কারণে যে, তিনি আলফা ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন এবং তিনি ছয় দফা দাবি টাইপ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৬০ সালে মূলত তার দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য ওই কোম্পানিতে যোগ দেন।
ছয় দফা দাবির পটভূমির ওপর আলোকপাত করে তিনি বলেন, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পূর্ব বাংলা বা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের নিরাপত্তার কোনোই গুরুত্ব ছিল না, তাই ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় এ অঞ্চলের জনগণ সম্পূর্ণ অরক্ষিত ছিল। সে কারণেই বঙ্গবন্ধু দূরদর্শিতার সঙ্গে ছয় দফা দাবি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেন।
সব ক্ষেত্রে বিশেষত বেসামরিক ও সামরিক চাকরিতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজস্বের বড় অংশই বাংলাদেশ থেকে আসত। কিন্তু এর সিংহভাগই পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে ব্যয় করা হতো।
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এ বিরাট বৈষম্য ও শোষণ-বঞ্চনার ইস্যুটি তুলে ধরেন এবং এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যান। আর তার সংগ্রমের পথ ধরেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোর সম্মেলনে ছয় দফা দাবি উত্থাপনের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাকে তা করতে বাধা দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফিরে আসেন এবং বিমানবন্দরেই সাংবাদিকদের কাছে সংক্ষেপে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছয় দফা দাবিতে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রদেশকে স্বায়ত্তশাসন দেয়ার প্রস্তাব রাখা হয়। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি ও দলের জাতীয় সম্মেলনে ছয় দফা গৃহীত হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু পরে দেশব্যাপী ছয় দফা দাবি প্রচারের পদক্ষেপ নেন এবং একের পর এক জনসভা করতে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যেখানেই ছয় দফার পক্ষে সভা করতে যেতেন সেখানেই তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হতো। বারবার তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং প্রতিটি জেলায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, নারায়ণগঞ্জের আদমজীনগরে ছয় দফা দাবির ওপর সর্বশেষ সভা করে ঢাকায় ফিরে আসার পরই গ্রেফতার হন। শুধু তাকেই নয়, আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে পুলিশ সেদিন তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনার প্রতিবাদে জনগণ দেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি পৃথিবীতে বিরল উদাহরণ যে জনগণ এ দাবিকে (ছয় দফা দাবি) গ্রহণ করেছিল এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য রক্ত দিয়েছিল। এটি শুধু বাঙালির পক্ষেই সম্ভব।’
তিনি বলেন, পাকিস্তানি শাসকদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে ছয় দফা দাবি পর্যায়ক্রমে এক দফা দাবিতে পরিণত হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু এবং ৩৪ জন অন্যান্য বেসামরিক-সামরিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের সাজানো ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ শীর্ষক মামলায় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পরে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলার জনগণ ওই মামলার কিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন শুরু করে এবং এটিকে গণজাগরণে রূপান্তরিত করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি গণআন্দোলনের মুখে মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগার থেকে মুক্তি পান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। ড. রফিকুল ইসলাম অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানান। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত চেক ও সার্টিফিকেট বিতরণ করেন। সারা দেশের ৩৫টি জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে ১০০ জন বিজয়ীসহ প্রতিযোগীরা সংযুক্ত ছিলেন। প্রতিযোগিতায় সারা দেশ থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯২৯ প্রতিযোগী অংশ নেন।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অনুষ্ঠানে কুইজ প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার বিজয়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রশাসন বিভাগের ছাত্র ইমতিয়াজ পাশা ও খুলনা রেলওয়ে গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা খুকু রানী অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। এ সময় ‘মুজিববর্ষের’ থিম সং এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ছয় দফা দাবির ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।- বাসস