নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ বুধবার। রাত ১২:০৮। ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫।

বাংলাদেশের ক্রিকেট : সবাই কেন ক্যালকুলেটর খুঁজছে?

সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫ ৬:৩৫
Link Copied!

অনলাইন ডেস্ক : আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স অর্থাৎ এআইকে জিজ্ঞেস করলাম বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা ক্যালকুলেটর খুঁজছে কেন? তার জবাবটা বেশ ইন্টারেস্টিং—সাধারণত বড় কোনো টুর্নামেন্ট চলাকালে বাংলাদেশের সমর্থকরা ক্যালকুলেটর খুঁজে বেড়ান তখনই, যখন নিজেদের দল সরাসরি জেতার মাধ্যমে পরবর্তী রাউন্ডে যেতে পারে না। অর্থাৎ সরল সমীকরণে নয়, বরং অন্য দলের জয়–পরাজয়, রান রেট, পয়েন্ট টেবিলের জটিল হিসাব–নিকাশে ঘুরপাক খায় বাংলাদেশের আশা।

এমন পরিস্থিতিতে সমর্থকরা হিসেব কষতে থাকেন—কে কাকে হারালে বাংলাদেশ টিকে থাকবে? কোন ম্যাচ ড্র বা পরিত্যক্ত হলে সুবিধা হবে? নেট রান রেট বাড়াতে হলে বাংলাদেশকে কত রানে জিততে হবে? অন্য দলের কত রানে হারতে হবে? এইসব খুঁটিনাটি হিসাব মিলিয়ে দেখা ছাড়া বোঝা যায় না, বাংলাদেশ পরের রাউন্ডে যেতে পারবে কি না।

এবারের এশিয়া কাপও তার ব্যতিক্রম নয়। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উচ্চাশা নিয়ে দুবাইয়ের বিমানে চড়লেও এরই মধ্যে অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে বাংলাদেশের সুপার ফোরের আশা। কার্যত ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে আজ (বুধবার) আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিততেই হবে লিটন দাসের দলের। শুধু জিতলেই হবে না, তাকিয়ে থাকতে হবে অন্যদের ফলের দিকেও।

শুধু কি এবার? ঘুরেফিরে প্রতিটা টুর্নামেন্টেই একই গল্প। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অন্তহীন হতাশার ভিড়ে সাফল্যের গল্প হাতেগোনা। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর দুই দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। মাঝে একাধিক বিশ্বকাপে চমক দেখালেও ধারাবাহিকতা নেই। বৈশ্বিক আসর দূরে থাকুক, মহাদেশীয় তথা এশিয়া কাপের ইতিহাসেই বাংলাদেশ কখনো চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। দু’বার ফাইনালে উঠলেও শেষ ধাপে হোঁচট খেয়েছে। সেই পুরোনো ব্যর্থতার গল্পই যেন আবার ফিরে এসেছে।

আরও পড়ুনঃ  রাজশাহীতে ফেনসিডিলসহ ৩ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

সমীকরণের ফাঁদে বারবার বাংলাদেশ
যে কোনো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ মানেই যেন ক্যালকুলেটরের খেলা। মাঠের লড়াইয়ে জেতা ছাড়াও অন্য দলের জয়-পরাজয়, রান রেট, আর জটিল সমীকরণ মিলিয়ে সমর্থকদের বসতে হয় অঙ্ক কষতে। বিশ্বকাপ হোক বা এশিয়া কাপ—বারবারই এই ফাঁদে আটকে গেছে বাংলাদেশ।

১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে ইতিহাস গড়লেও শেষ পর্যন্ত ‘ক্যালকুলেটরে’ হিসেব মেলেনি, তাই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চমক দিলেও সুপার এইটে গিয়ে আর জেতা হয়নি যথেষ্ট। ২০১১ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও ইংল্যান্ডকে হারানো সত্ত্বেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বড় হারের কারণে নেট রান রেটে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ।

শেষ পর্যন্ত সমীকরণে আটকে গিয়ে বিদায় নেয় স্বাগতিকরা। ২০১৯ সালে সাকিব আল হাসানের রূপকথার মতো পারফরম্যান্সও যথেষ্ট হয়নি। সেমিফাইনালে যেতে হলে পাকিস্তানকে বড় ব্যবধানে হারতে হতো, কিন্তু সেটা হয়নি। ফলে আবারও সমীকরণে আটকে যায় টাইগাররা।

এশিয়া কাপের মঞ্চেও বারবার বাংলাদেশকে সমীকরণের ফাঁদে পড়তে হয়েছে। ২০০০, ২০০৪ ও ২০০৮ আসরে নেট রান রেটের জটিলতায় বাদ পড়ে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ভারতের কাছে হেরে শুরুতে সমীকরণে ঝুলে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ফাইনালে ওঠে টাইগাররা। ২০১৮ সালে সুপার ফোরের হিসাব মেলাতে হয়েছে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ম্যাচের দিকে তাকিয়ে। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করলেও পথটা সহজ ছিল না।

আরও পড়ুনঃ  পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিনব উপায়ে প্রতিবাদ জানাতে পারেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা

২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে সরাসরি বিদায় নেয় বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচ জিতলেই সমীকরণ বদলাতো, কিন্তু পারেনি টাইগাররা। ২০২৩ সালে সুপার ফোরে উঠলেও ফাইনালে যাওয়ার জন্য তাকিয়ে থাকতে হয়েছিল পাকিস্তান–শ্রীলঙ্কার ম্যাচের দিকে। শেষ পর্যন্ত সমীকরণ মেলেনি।

বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন আফগান কোচ জনাথন ট্রট। সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তান বেশ সফল বাংলাদেশের বিপক্ষে। আসন্ন ম্যাচেও রশিদ খানরা ফেবারিট হিসেবে নামবে। তবে বিনয়ী ট্রট এ কথায় সায় দিলেও বললেন ‘যদি আপনি অতীতের দিকে দেখেন, বাংলাদেশ এই প্রতিযোগিতায় কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে…।’ মাঝপথেই তার ভুল ভাঙিয়ে দিলেন মিডিয়া ম্যানেজার। কিন্তু ট্রট নিজের ভুল মানতে নারাজ। উল্টো বললেন, ‘আমার তো মনে হয় ওরা ৫০ ওভারের এশিয়া কাপ জিতেছে!’ আবারও নিশ্চিত করা হলো, বাংলাদেশ কখনো কোনো সংস্করণেই চ্যাম্পিয়ন হয়নি।

ট্রট তখন অবিশ্বাস নিয়ে মিডিয়া ম্যানেজারের দিকে তাকালেন। যখন নিশ্চিত হলেন, বাংলাদেশ তিনবার ফাইনালে উঠলেও কখনো শিরোপা জিততে পারেনি, তখন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নতুন করে শুরু করলেন তার বক্তব্য, ‘আমি ভেবেছি তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।’ এরপর মূল কথায় ফেরেন, ‘আমার মনে হয়, বাংলাদেশের সত্যিকারের ম্যাচ জেতানোর মতো খেলোয়াড় আছে। আমাদের কাল (আজ) ভালো চ্যালেঞ্জ আর পরীক্ষাই দিতে হবে। বিরতি পেয়ে আমরা মানসিক ও শারীরিকভাবে চাঙা হয়েছি।’

এর আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বাস্তবতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিলেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। নিজের বিশ্লেষণে অশ্বিন বলছিলেন, বাংলাদেশ দল নিয়ে বেশি কথা বলার কিছু নেই। ভারতের মতো দলকে বাংলাদেশ কখনোই হারাতে পারবে না, মানের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক দূরে। এসব মন্তব্য শুনে সেসময় বাংলাদেশের অনেকে তখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। কিন্তু এখন তাদের সুর বদলাতে হয়েছে। ফেসবুকে কেউ কেউ লিখেছেন, ভারতের বিশ্লেষকদের সঠিক প্রমাণ করতেই বাংলাদেশ এমন ক্রিকেট খেলছে।

আরও পড়ুনঃ  নেপালের প্রধানমন্ত্রী হলেন সুশীলা কার্কি, শপথ নেবেন আজ

বাংলাদেশ দলে মোটা বেতনের হেড কোচ, ব্যাটিং কোচ থাকার পরও এশিয়া কাপ সামনে রেখে সংক্ষিপ্ত মেয়াদে পাওয়ার হিটিং কোচ উড়িয়ে এনেছিল বিসিবি। ইংলিশ পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উডের তত্ত্বাবধানে ক্যাম্প করেছে লিটন-শান্তরা। প্রথম দফায় নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ভালই প্রয়োগ করেছে বাংলাদেশ টপ অর্ডাররা। তবে ঘরের মাঠে তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে কিছুটা ব্যাটের ঝাঁঝ দেখালেও আবুধাবিতে পাওয়ার হিটিং কোচের ফর্মূলা যেন ভুলে গেছে টাইগার ব্যাটাররা।

এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশ হংকংয়ের দেওয়া ১৪৪ রান তাড়া করতে নেমে ১৪ বল হাতে রেখে জিতেছে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে লিটন ছাড়া অন্য কারো স্ট্রাইক রেট ছিল না বলার মতো। যে কারণে নেট রানরেটটাও বাড়াতে পারেনি। এরপর একই মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নেমেও ব্যাটিংয়ে একই দুর্দশা! টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ওভারপ্রতি ৬.৯৫ স্ট্রাইক রেটে বাংলাদেশের স্কোর ১৩৯/৫! এমন ব্যাটিং প্রদর্শনীর ম্যাচে ৩২ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে জিতে শ্রীলঙ্কা।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই চক্র থেকে বাংলাদেশ কবে মুক্তি পাবে? মুক্তির পথ অনেক, তবে আপাতত দরকার শক্তিশালী ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো। কিন্তু সেটা আর হচ্ছে কই!

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।