নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ বৃহস্পতিবার। রাত ১১:৪৬। ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫।

বাংলাদেশ ফুটবল দলের নেপাল ভোগান্তির সাতকাহন

সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫ ৬:১১
Link Copied!

অনলাইন ডেস্ক : সেপ্টেম্বর ফিফা উইন্ডোতে বাংলাদেশ কাঠমান্ডুতে দুই ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেপালে সরকার পতন হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এক ম্যাচ খেলেই দেশে ফিরতে হয়েছে জামালদের। নেপালের উদ্দেশ্যে ক্যাম্প শুরুর পর থেকে দেশে ফেরা পর্যন্ত প্রতি পরতে পরতে ভোগান্তিতে ছিলেন জামালরা।

দুই সপ্তাহের বেশি অসম্পূর্ণ অনুশীলন
১৩ আগস্ট জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু হয়েছিল। ১৫ আগস্টে কিংসের ১০ ফুটবলারের জাতীয় দলে যোগ দেয়ার কথা ছিল। বসুন্ধরা কিংস খেলোয়াড় না ছাড়ায় মাত্র ১৩ জন নিয়ে অনুশীলন শুরু হয়। এরপর বয়সভিত্তিক ফুটবলার নিয়ে জাতীয় দলের ক্যাম্প চলে। ৩১ আগস্ট কিংসের ফুটবলাররা যোগ দেন। মাত্র তিন দিনের পূর্ণাঙ্গ অনুশীলনে নেপাল রওনা হয় বাংলাদেশ দল।

শেষ মুহূর্তে হামজাকে না পাওয়া
বাংলাদেশ ফুটবল দলের এখন সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ইংলিশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে খেলা ফুটবলার হামজা দেওয়ান চৌধুরী। বাফুফে হামজাকে নেপালে দুই ম্যাচে খেলানোর চেষ্টা করেছিল। লেস্টার সিটির হয়ে শেষ ম্যাচে আঘাত পাওয়ায় ও ক্লাবের ব্যস্ত সুচি থাকায় হামজাকে পায়নি বাংলাদেশ। ২ সেপ্টেম্বর হামজার বিষয়ে বাফুফে আনুষ্ঠানিকভাবে জ্ঞাত হয়। হামজা না আসায় বাংলাদেশের মতো নেপালের সমর্থকরাও আশাহত হন।

কাঠমান্ডু যাত্রায় ৭ ঘণ্টা বিলম্ব
৩ সেপ্টেম্বর দুপুর দেড়টায় বাংলাদেশ দলের ফ্লাইট ছিল কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে। ট্যাকনিক্যাল জটিলতার কারণে সেই ফ্লাইট সন্ধ্যা সাতটায় পুনঃনির্ধারিত হয়। এত লম্বা সময় অপেক্ষা হলেও বিমান জাতীয় দলের জন্য তেমন কোনো বিশেষ ব্যবস্থা করেনি। বাফুফে সভাপতি জাতীয় দলের স্পন্সর ইউসিবি’র সঙ্গে আলোচনা করে বিমানবন্দরে ইউসিবি লাউঞ্জে বিশ্রামের ব্যবস্থা করেন। শেষ পর্যন্ত রাত পৌনে আটটায় কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে বিমান ছাড়ে। ঐ দিন বিলম্বের জন্য আর কাঠমান্ডুতে অনুশীলন করার সুযোগ পাননি ফুটবলাররা।

আরও পড়ুনঃ  মোল্লাপাড়ার পাহাড়িয়াদের কেউ উচ্ছেদ করতে পারবে না : মিনু

স্টেডিয়ামের বদলে হোটেলে প্রেস কনফারেন্সে
অল নেপাল ফুটবল এসোসিয়েশন (আনফা) সাধারণত ম্যাচের আগের দিন দশরথ স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলন করে। ৬ সেপ্টেম্বর আগের দিন সম্মেলন স্টেডিয়ামে হলেও দ্বিতীয় ম্যাচের আগে সম্মেলন হয়েছে টিম হোটেলে। কারণ ঐ দিন আন্দোলন বড় হতে শুরু করেছিল। ফলে স্টেডিয়ামের পরিবর্তে হোটেলে সম্মেলন ছিল নিরাপদজনক।

অনুশীলন বাতিল
৬ সেপ্টেম্বর ম্যাচের পরের দিন বাংলাদেশ অনুশীলন করেনি। ৭ সেপ্টেম্বর অনুশীলন না করায় ৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ম্যাচের আগে অনেকটা বাধ্যতামূলকই ছিল বাংলাদেশের অনুশীলন। সেদিন স্থানীয় সময় সোয়া তিনটায় ছিল দশরথে জামালদের সূচি। অনুশীলনের জন্য হোটেল থেকে রওনা হওয়ার সময় বাধা দেয়া হয়। কারণ তখন কাঠমান্ডুর রাস্তাঘাট আন্দোলনে মুখর। নিরাপত্তাশঙ্কায় অনুশীলন বাতিল হয়।

রাতে খেলা বাতিলের সিদ্ধান্ত
বিকেলে অনুশীলন বাতিলের পরই ম্যাচ না হওয়ার শঙ্কা ছিল। সেই শঙ্কায় রাতে সত্যি হয়েছে। বাফুফে ও আনফা যৌথভাবে ৮ সেপ্টেম্বর রাতে দ্বিতীয় ম্যাচ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। আনফা ম্যাচটি ক্লোজড ডোর করার প্রস্তাব দিলেও বাফুফে নিরাপত্তার কারণে রাজি হয়নি। অক্টোবরে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচের প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশে নেপালে দুই ম্যাচ খেলতে চেয়েছিল। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এক ম্যাচ খেলেই ফিরতে হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  রাজশাহীতে পুলিশের পৃথক অভিযানে গাঁজা ও ইয়াবা উদ্ধারসহ গ্রেপ্তার ৩

রিটার্ন এগিয়ে আনার পর ফ্লাইট স্থগিত
কাঠমান্ডু থেকে বাংলাদেশের ফিরতি ফ্লাইট ছিল ১০ সেপ্টেম্বর। ৯ সেপ্টেম্বর খেলা বাতিল হওয়ায় বাফুফে জামালদের রিটার্ন টিকিট এক দিন এগিয়ে আনে। কাঠমান্ডুর অশান্ত পরিবেশ থেকে ফুটবলারদের দ্রুত সময়ে দেশে আনতে চেয়েছিল বাফুফে। বাংলাদেশ দল হোটেল থেকে চেক আউট করে এয়ারপোর্ট যেতে চেয়েছিল। কিন্তু রাস্তা এতটাই উত্তপ্ত ছিল যে এয়ারপোর্ট যেতে পারেনি বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশ বিমানও কাঠমান্ডুতে ৯ সেপ্টেম্বর নামতে পারেনি।

এয়ারপোর্ট বন্ধ, হোটেল বন্দী ফুটবলাররা
৯ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকে কাঠমান্ডু এয়ারপোর্ট বন্ধ ছিল। ফলে গতকাল (১০ সেপ্টেম্বর) পুরো দিনই বাংলাদেশ দল হোটেল বন্দী অবস্থায় ছিল। নেপালে কারফিউ চলায় রাস্তাঘাটে চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। হোটেলে বাংলাদেশ দল জিম ও সুইমিং করে সময় কাটিয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডুতে অনেক জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে। বাংলাদেশ টিম হোটেলের আশেপাশেও আগুন জ্বলেছে। এতে খানিকটা উত্তেজনা থাকলেও তেমন সমস্যা হয়নি। নিরাপদেই ছিল বাংলাদেশ দল।

আরও পড়ুনঃ  নির্বাচনকালে তথ্যে প্রবাহে গণমাধ্যমকে বাধা দেওয়া হবে না: মাহফুজ আলম

ঢাকায় যাত্রাতেও ৬ ঘণ্টা অপেক্ষা
গতকাল সন্ধ্যার দিকে কাঠমান্ডু বিমানবন্দর সচল হয়। বাফুফে তাৎক্ষণিকভাবে দল সহ সেখানে কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের ফেরানোর উদ্যোগ নেয়। সরকার, ফেডারেশন ও কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সম্মিলিত প্রয়াসে আজ দুপুরে বাংলাদেশ দলের ফ্লাইট নিশ্চিত হয়। টিম হোটেল ছেড়ে স্থানীয় সময় নয়টার দিকে বাংলাদেশ দল বিমানবন্দরে পৌছায়। সেখানে প্রায় ছয় ঘণ্টা অপেক্ষার পর স্থানীয় সময় আড়াইটার পর বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানে উঠেন ফুটবলাররা।

সাংবাদিকরাও ছিলেন সংকটে
বাংলাদেশ-নেপাল ম্যাচ কাভার করতে ঢাকা থেকে ১৫ জনের বেশি সাংবাদিক কাঠমান্ডু গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ দলের মতো তারাও ভোগান্তিতে পড়েছিলেন। সাংবাদিকদের সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করতে হয়। ৮-১০ সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডুতে ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ সেবা অনেক হোটেল ছিল না। এতে দেশে সংবাদ পাঠাতে বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন। কারফিউ বা বিশেষ ব্যবস্থা চলায় পেশাগত কাজে হোটেলের বাইরেও সেভাবে বের হওয়ার সুযোগ ছিল না গত দুই দিন। বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট স্থগিত হওয়ায় সাংবাদিকদের রিটার্ন নিয়ে ছিল অনিশ্চয়তা। পরবর্তীতে বাফুফে দলের সঙ্গে সাংবাদিকদের তালিকা যোগ করেই বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করেছে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।