অনলাইন ডেস্ক : ভারতে আওয়ামী লীগ সদস্যদের বাংলাদেশ-বিরোধী কোনো কার্যকলাপ সম্পর্কে নয়াদিল্লি ‘অবগত নয়’ বলে দাবি করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বুধবার (২০ আগস্ট) মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক সরকারি বিবৃতিতে বলেন, ‘ভারতে আওয়ামী লীগের সদস্যদের বাংলাদেশ-বিরোধী কোনো কার্যকলাপ বা ভারতীয় আইনের পরিপন্থী কোনো পদক্ষেপের বিষয়ে ভারত সরকার অবগত নয়।’
গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কে তীব্র অবনতি দেখা দেয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার ভারতের মাটি থেকে অন্য দেশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালনার অনুমতি দেয় না। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিবৃতিটি তাই অপ্রাসঙ্গিক।’
জয়সওয়াল বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ভারত তার প্রত্যাশা পুনর্ব্যক্ত করে যে, জনগণের ইচ্ছা এবং ম্যান্ডেট নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অবাধ, সুষ্ঠু এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
এর আগে, একই দিন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবেশী ভারতকে নয়াদিল্লি ও কলকাতায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যালয় স্থাপিত হয়েছে বলে খবর পাওয়ার পর সেগুলো অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বাংলাদেশি নাগরিকদের দ্বারা- বিশেষত নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের পলাতক নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে ভারতের মাটিতে বৈধ বা অবৈধভাবে অবস্থান করে কার্যালয় স্থাপনসহ বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী যে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের জনগণ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট চ্যালেঞ্জ।’
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিষিদ্ধ দলটি ভারতে কার্যালয় স্থাপন করেছে বলে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। এই ঘটনা ঘটছে এমন এক সময়ে যখন ‘ভারতের মাটিতে বাড়তে থাকা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ড’ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ঢাকার বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, এটি ‘বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক পরিবর্তনের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে এবং পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ-ভারত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার ঝুঁকি তৈরি করছে।’
বিবৃতিতে সতর্ক করে দেওয়া হয়, এই বিষয়টি ‘বাংলাদেশে জনমত উত্তেজিত করতে পারে, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার চলমান প্রচেষ্টাকে প্রভাবিত করতে পারে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অতএব, বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছে, যেন অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় – যাতে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক ভারতের মাটিতে অবস্থান করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে না পারে এবং কোনোভাবেই এমন কার্যক্রমকে অনুমোদন বা সহায়তা দেওয়া না হয়। পাশাপাশি ভারতের মাটিতে নিষিদ্ধ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অফিসসমূহ দ্রুত বন্ধ করতে হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিষিদ্ধ দলের অনেক সিনিয়র নেতা ‘বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী গুরুতর অপরাধে দায়ের করা একাধিক মামলায় পলাতক অবস্থায় এখনো ভারতের ভূখণ্ডে অবস্থান করছে।’
বিবৃতিতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, চলতি বছরের ২১ জুলাই একটি এনজিওর আড়ালে ‘এই নিষিদ্ধ দলের কিছু সিনিয়র নেতা দিল্লি প্রেসক্লাবে গণসংযোগ কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছিল এবং পরবর্তীতে উপস্থিত সাংবাদিকদের মাঝে বুকলেট বিতরণ করেছিল।’
এছাড়া বিবৃতিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনও উল্লেখ করা হয়, যেখানে দলটির ‘ভারতের মাটি থেকে কার্যক্রম পরিচালনার ক্রমবর্ধমান পদক্ষেপ’ নিশ্চিত করা হয়েছে।-ইত্তেফাক