স্টাফ রির্পোটার : আর্জেন্টিনার মানুষ, ভাষা কিংবা সংস্কৃতি কিছুতেই মিল নেই বাংলাদেশের। বাংলাদেশ থেকেও হাজার হাজার কিলোমিটার দূরত্বের দেশ আর্জেন্টিনা। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রীড়ামোদিদের হৃদয়ে আর্জেন্টিনা অন্যরকম জায়গা নিয়ে আছে। আর আর্জেন্টিনা মানেই ম্যারাডোনা।
বাংলাদেশের মানুষের ফুটবল প্রেম পুরনো। কিন্তু কোনও দলকে নতুন করে ভালোবাসতে শুরু করা, সেই দলের সমর্থনে নিজের সবকিছু উজাড় করে দেয়া-সবকিছুই বুঝি এই একজনের কল্যাণেই। ক্ষ্যাপাটে কিংবা পাগলাটে, যাই বলুন না কেন, এক ম্যারাডোনাই আর্জেন্টিনার ফুটবলকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। যার রেশ এসে পড়েছে এই বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে। আর এ কারণেই রাজশাহীতেও তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ক্রীড়াপ্রিয় মানুষের মধ্যে। তাঁকে রাজশাহীর কোনো খেলোয়াড় কিংবা সংগঠক সরাসরি দেখেন নি। কিন্তু টেলিভিশনের পর্দায় তার ফুটবলীয় জাদু দেখে মুগ্ধ হয়েছেন অনেকেই।
ম্যারাডোনার মৃত্যুতে রাজশাহীর বেশ কয়েকজন ক্রীড়া সংগঠক ও খেলোয়াড়দের কাছে সোনার দেশের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল। এদেরই একজন হলেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাঠ কাঁপানো এককালের ফুটবলার কেএম মোসাদ্দেকুল কুদ্দুস সিদ্দিকী সেলমি। তিনি বলেন, বিশ্বের উন্নতম খেলোয়াড়দের মধ্যে ম্যারাডোনা একজন। ১৯৭৮ সাল থেকে আমি তার অনেক বড় ভক্ত। যখন থেকে খেলা দেখা শুরু করেছি, তখন থেকে উনার খেলায় আমি মুগ্ধ। বিশ্বকাপে উনার খেলার জন্যই অনেক দর্শকের মন জয় করতো। তাঁর কারো সাথে কখনই তুলনা করা যাবে না। তিনি সর্বকালের সেরা ফুটবল খেলোয়াড়। আমি ব্রাজিলের সমর্থক হলেও ব্যক্তি ও পছন্দের খেলোয়াড় হিসাবে ম্যারাডোনার ভক্ত। তার সবচেয়ে মুগ্ধ করা দিকটা হলো উপস্থিত বুদ্ধি এবং তার বাম পায়ের কারিগরি দক্ষতা অসাধারণ। তার শারীরিক সক্ষমতা ও দক্ষতা সবারই নজর কাড়ে। তার অকাল মৃত্যুতে আমি শোকাহত। তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। নতুনরা যেন তার খেলা থেকে অনুপ্রাণিত হন।
রাজশাহীর ফুটবলার ও জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওয়াহেদুনন্নবী অনু। তিনি বলেন, মারাডোনা সম্পর্কে যাই বলি না কেন কম হবে। সম্পূর্ণ আর্জেন্টিনাকে ঘিরে মারাডোনার বসবাস। শুধু আর্জেন্টিনা নয়, ফুটবলপ্রেমিদের ঘিরেই তার বসবাস। যুগে যুগে একজন ম্যারাডোনা হয়। তার ক্রীড়া কৌশল ছিল এক অনন্য বিষয়। খেলার মেইন কৌশলই ম্যারাডোনাকে ঘিরে। আসলে ফুটবল হলো বলের খেলা, পায়ের খেলা। তার যে বলের সাথে পায়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল, তা আর কারো মধ্যে দেখা যায় না। বলও তার মতো ক্রীড়া করতো। যখন শুনলাম যে উনি মারা গেছেন, তখন বলার কিছু নেই। আসলে আমরা শোকাহত। তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। নতুন প্রজন্মকে তার খেলা দেখতে হবে। তার কৌশলগুলো এবং ক্রীড়া দেখলে অনেকে উপকৃত হবে। তার সব কিছুই মিডিয়ার মাধ্যমে বড় বড় কোচরা অনুকরণ করে। তাই সবাইকে তার ফুটবলের জাদুকরি বিদ্যাকে ধারণ করার আহ্বান জানাবো।
রাজশাহী সোনালী অতীত ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ফুটবলার আলী আফতাব তপন বলেন, ম্যারাডোনার মতো কেউ নেই। ম্যারাডোনার খেলা আমরা অনেক দেখেছি। তিনি ফুটবল টিমের খেলোয়াড় হিসেবে তিনিই সেরা। আর ব্যক্তি হিসেবে তার মতো অন্য কোনো খেলোয়াড় হতে পারে না। তিনি একা খেলতেন না বরং তার সাথে যারা খেলতেন তাদের কাউকে কৌশলের মাধ্যমে তিনি সহায়তা করতেন। তার শারীরিক ক্ষমতা ও দক্ষতা অন্য কোনো খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে কম দেখা যায়। তার মৃতুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। সকল খেলোয়াড়কে তার খেলা দেখে অনুপ্রোণিত হতে হবে।
দিগন্ত প্রসারী ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরিফুল ইসলাম নুরুল হক বলেন, মারাডোনা আর্জেন্টিনার একটি সমর্থক নাম। অন্যদিকে ফুটবল এবং ম্যারাডোনা একটি সমার্থক নাম। ফুটবলে মারাডোনা যুব সমাজকে এক অন্যতম উচ্চতায় এনেছেন এবং যুব সমাজকে ফুটবল প্রেমে আবদ্ধ করেছেন। ফুটবলে মারাডোনার অন্যন্য সাফল্য, ব্যক্তিগত নৈপূন্য তাকে অনন্তকাল বাঁচিয়ে রাখবে। তার কৌশল, তার গোল সব দিক আকর্ষণীয়। তার সব কিছুই অনন্য। তার নৈপূণ্যের কোনো তুলনা হয় না। তার ক্ষিপ্রতা, তার বিচক্ষণতা- জ্ঞান সবই অনন্য।
রাজশাহী জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলম ফরহাদ বলেন, আমি টেলিভিশনের মাধ্যমে তাঁর অনেক খেলা উপভোগ করেছি। এমন খেলোয়াড় যুগে যুগে একবারই হয়। আসলে উনার সমকক্ষ কেউ ছিল না। তিনি অনেক বড় মাপের স্ট্রাইকার ছিলেন যা অনেক খেলোয়াড় প্রেমিকের নজর কাড়ে। তিনি মাঠের যে কোনো প্রান্ত থেকে গোল দিতে সক্ষম ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমরা অনেকেই শোকাহত।
জেলা দলের সাবেক ফুটবলার নুরে আলম বাচ্চু বলেন, এরকম খেলোয়াড় আর আসবে কিনা সন্দেহ। তিনি অদ্বিতীয়। তিনি ফুটবল জগতে সেরা ছিলেন এবং তিনি সেরা থাকবেন, তার মতো আর কেউ কখনো আসবে না। তার মৃত্যুতে শুধু আমিই নয় সব খেলোয়াড় প্রেমীই শোকাহত। নতুন প্রজন্মকে তার খেলা রাজশাহী জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে জেএফএ অনূর্ধ্ব ১৪ মহিলা জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। আর এই আসরে খেলবে রাজশাহীর মেয়েরা। গোদাগাড়ীর সোনাদিঘি এলাকার থেকে উঠে আসা ক্ষুদে ফুটবলার মায়া লাকড়ার কাছে প্রিয় ছিলেন মারাডোনা। ইউটিউবে মারাডোনার খেলা দেখেছি। তাকে দেখে আমরাও চেষ্টা করি কীভাবে মারাডোনার মতো করে খেলার। তার মৃত্যুতে আমরাও শোকহত।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : ইয়াকুব শিকদার
প্রধান কার্যালয় : বহরমপুর (সিটি বাইপাস), জিপিও-৬০০০, রাজপাড়া, রাজশাহী।
মেইল: newssomoyerkotha@gmail.com , editorsomoyerkotha@gmail.com মোবাইল : ০১৮১৭-১২২২৪৩