স্টাফ রিপোর্টার : ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। এর মধ্যে শেষ হয়েছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। আর এই নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের সামনে হাজির করছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রচার শেষ হয়েছে মঙ্গলবার রাত ১২টায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী, রাত ১২টা পর্যন্ত প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারবেন। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ।
শেষদিনের প্রচারকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে, জানাচ্ছেন নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি। বিভিন্ন বিভাগের সামনে ও আবাসিক হলগুলোতে চলছে প্রার্থীদের সরাসরি প্রচার, পোস্টার ও হ্যান্ডবিল বিতরণ এবং শুভেচ্ছা বিনিময়।
প্রচারণার শেষ দিন হিসেবে মঙ্গলবার সকাল থেকে প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয় করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রচারণায় অংশ নিয়েছে ছাত্রদল-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’, ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সংসদ’, ছাত্র অধিকার ও ছাত্র ফেডারেশন-সমর্থিত ‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’, বামধারার ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদসহ ১১টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
বিশেষ করে ক্যাম্পাসের আমতলা, পরিবহন মার্কেট, বুদ্ধিজীবী চত্বর, শহিদ মিনার, চারুকলা ও কৃষি অনুষদ, পশ্চিম পাড়া এলাকা এবং বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে প্রার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
ড. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে প্রচার চালানোর সময় কথা হয় রাকসুর ইতিহাসে প্রথম নারী ভিপি পদপ্রার্থী তাসিন খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রচারের শেষ দিন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সবার কাছে পৌঁছাতে। তবে আমাদের সীমাবদ্ধতা হলো, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এখনো সবার কাছে পুরোপুরি পৌঁছাতে পারিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এক হাতে সবকিছু সামলাতে হয়এটা বড় একটা চ্যালেঞ্জ।
এসময় ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী শেখ নূর-উদ্দীন আবীর বলেন, আমাদের প্যানেলের বৈচিত্র্যতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন। বিশেষ করে প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীরা আমাদের ভালোভাবে গ্রহণ করছেন। কারণ তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবিতে আমরা আন্দোলন করেছিলাম। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে। আর যারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।
আমতলায় প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। প্রচারের তিনি বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ফলে ক্যাম্পাসে বাড়তি আমেজ তৈরি হয়েছে। বারবার নির্বাচন পেছানোয় আমরা দীর্ঘ সময় পেয়েছি প্রচারের জন্য। শিক্ষার্থীদের কাছে কয়েকবার যাওয়া হয়েছে, তারাও আমাদের সাদরে গ্রহণ করছেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি।
অনেক বছর পর নির্বাচন হওয়ায় ভোট কাস্টিংয়ের হার সম্পর্কে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, আশা করি, সবকিছু ঠিক থাকলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ভোট দিতে আসবেন।
রাকসু নির্বাচনে ২৩টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ভিপি পদে ১৮, জিএস পদে ১৩ এবং এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৬ জন। ছাত্রদল ও শিবির সমর্থিতসহ মোট ১১টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫টি পদে ৫৮ জন প্রার্থী এবং হল সংসদ নির্বাচনের ১৫টি পদের বিপরীতে ১৭টি হলে মোট ৫৯৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রাকসু ও সিনেট নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ এবং পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন। পুনর্বিন্যস্ত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৬ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গণনা শেষে সেদিনই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।