স্টাফ রিপোর্টার: ভোটকেন্দ্রে আনতে আচরণবিধি ভেঙেই ভোটারদের জন্য রিকশা-ভ্যানের ব্যবস্থা করেন প্রার্থীরা। আগে সব ভোটেই এ চিত্র দেখা যেত। তারপর কয়েকটি নির্বাচনে বেশিরভাগ ভোটার ভোটই দিতে যাননি। প্রার্থীদের পক্ষ থেকে ভোটারদের জন্য রিকশা-ভ্যানেরও ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বৃহস্পতিবার এবার আবার সেই চিরচেনা চিত্র দেখা গেল রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলায়।
সব ভোটারই যে প্রার্থীর ব্যবস্থা করা রিকশা-ভ্যানে গিয়েছেন তা নয়। পায়ে হেঁটে কিংবা অন্য কোন উপায়ে তাঁরা ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন। লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর পর তাঁরা নির্বিঘ্নে ভোটও দিয়েছেন। কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীর সমর্থকদের মিছিল, শ্লোগান, ভোটারের কাছে ভোট চাওয়া- সবই দেখা গেছে। এ রকম উৎসবমুখর পরিবেশে গোদাগাড়ী তানোরের ১৫টি ইউনিয়নে ভোট হয়েছে। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
সকালে গোদাগাড়ীর গোগ্রাম ইউনিয়নের আলীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে নারী-পুরুষের লম্বা লাইন। দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে ভোটারেরা একে একে ঢুকে স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিয়ে বের হচ্ছিলেন। লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন লালাদীঘি গ্রামের মনিকা মল্লিক। তিনি বলেন, ‘আগেরবার রাজার ভোটে ভোট দিতে পারিনি। কেন্দ্র থাইক্যা ঘুর্যা য্যাত হইছিলো। এবের তো পরিবেশ খুব ভাল।’ কেন্দ্রেই ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ। তিনি বললেন, ‘ভোটের পরিবেশ খুব সুন্দর। কারও কোন অভিযোগ নেই। ভোটারেরা যাঁকে খুশি তাঁকে ভোট দিতে পারছেন।’ এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার শাহাদাত হোসেন জানালেন, সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তবে সকাল সাড়ে ৭টা থেকেই ভোটাররা কেন্দ্রে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।
গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়নের রাজাবাড়িহাট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানেও ভোটারেরা ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন। নারী-পুরুষের দুটি আলাদা কেন্দ্র করে সেখানে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছিলো। লম্বা লাইনের মধ্যে কোন কোন নারী মাঠে বসেও ছিলেন। এই কেন্দ্রের নৌকার প্রার্থী বেলাল উদ্দিন সোহেল পুরুষ ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আশরাফুজ্জামান মাসুমের কাছে গিয়ে অভিযোগ করলেন, ভোট গ্রহণ হচ্ছে খুব দেরিতে। ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে অস্থির হয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ সময় না দাঁড়িয়ে ভোটারের চলে যাওয়ারও আশঙ্কা আছে। তাই দ্রুত যেন ভোটগ্রহণ করা যায় সে বিষয়টি তিনি দেখার অনুরোধ করলেন। প্রিজাইডিং অফিসার আশরাফুজ্জামান মাসুম বলেন, একজন ভোটারকে তিনটা করে ভোট দিতে হচ্ছে। তাই দেরি হচ্ছে। ব্যালটের কারণেও একটু সময় বেশি লাগছে। যদি ইভিএম হতো, তাহলে দ্রুত হতো।
সকাল ৮টায় তানোর উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়নের হাড়দহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রচুর ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে। সেখানে ভোট দিয়েছেন মো. আসিফ নামে এক তরুণ ভোটার। তিনি বলেন, সকাল সকাল লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে পেরেছি। এর আগে ভোট দিতে না পারলেও আজ সুন্দর পরিবেশে ভোট হচ্ছে। আমরা তরুণ ভোটাররা চাই তানোরে প্রতিবার যেনো এভাবে পছন্দের যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে পারি।
দুপুর সাড়ে ১২টায় কামারগাঁ ইউনিয়নের পাড়িশো দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নতুন ভোটার তাসনিম খাতুন বললেন, ভোট কেন্দ্রের পরিবেশটা আমার ভালো লেগেছে। শান্তিপূর্ণভাবে আমি আমার ভোট দিতে পেরেছি। কেন্দ্রে ঈদের মতো আনন্দঘন পরিবেশ।
ভোটের আগে কলমা ইউনিয়নে ছিলো তুমুল উত্তেজনা। ভোটের দিন বিকেল সাড়ে ৩টায় ইউনিয়নের চোরখৈর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, শান্ত পরিবেশ। হামিদুর রহমান নামের এক ভোটার বললেন, ভয়ে ভয়ে ভোট দিতে এসেছি। এসে আজকের ভোট কেন্দ্রের পরিবেশ দেখছি খুব ভালো। পছন্দের প্রার্থীকে এভাবে ভোট দিতে পেরে আমি আনন্দিত। আমি চাই সব সময় যেনো এভাবে আমরা ভোট দিতে পারি।
তানোরের ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টিতে ভোটগ্রহণ হয়েছে। আগের দিন বুধবার সন্ধ্যায় তানোরের সরনজাই ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেছে। আর গোদাগাড়ীর ৯ ইউনিয়নের সবকটিতেই ভোটগ্রহণ হচ্ছে। দুই উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের মধ্যে শুধু গোদাগাড়ী সদর ইউনিয়নে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। অন্য সবগুলোতে ভোট হয়েছে ব্যালটে।
সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, সুশৃঙ্খল পরিবেশে ভোট শেষ হয়েছে। কেউ কোন অভিযোগ করতে পারবে না। আমরা আশা করছি, ভোটের পরেও এই সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকবে।
4