স্টাফ রিপোর্টার : নদীমাতৃক বাংলাদেশে দেশীয় প্রজাতির মাছের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজশাহীতে শুরু হয়েছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ। নদী-নালা, খাল-বিল আর হাওর-বাওড়ের দেশ বাংলাদেশ। একসময় এই উর্বর জলাভূমিগুলো ছিল দেশি প্রজাতির মাছে পরিপূর্ণ। কিন্তু কালের বিবর্তনে, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে সেই চেনা রূপ আজ অনেকটাই ম্লান।
পুঁটি, টেংরা, খলসে, মলা, বাতাসিসহ বহু প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ‘অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশী মাছে দেশ ভরি’-এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই সপ্তাহের উদ্বোধন করা হয়। সপ্তাহব্যাপী এই আয়োজন চলবে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত। সেই লক্ষ্যে সোমবার (১৮ আগস্ট) সকালে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করার মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা হয়।

অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারসহ অন্যরা
এরপর একটি বর্ণাঢ্য সড়ক র্যালি জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) গিয়ে শেষ হয়। পরে পিটিআই মিলনায়তনে একটি আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মৎস্য খাতে অসামান্য অবদানের জন্য জেলার সেরা ৪ জন ব্যক্তি এবং ৩টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা স্মারক ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলাম, মৎস্য অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মো. সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া এবং মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক উপপরিচালক মো. আব্দুল ওহায়েদ মন্ডল ও মনিরুজ্জামান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, “মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি রোল মডেল, কিন্তু আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, যা আমাদের খাদ্য শৃঙ্খল ও জীববৈচিত্র্যের জন্য অশনি সংকেত।” তিনি বিলুপ্তপ্রায় দেশি মাছের প্রজাতি রক্ষায় সরকারের অভয়াশ্রম তৈরির নীতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা তুলে ধরেন এবং এই উদ্যোগ সফল করতে সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি মৎস্যজীবী ও সাধারণ মানুষকে পাহারাদারের ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসক আফিয়া আকতার তার বক্তব্যে বলেন, “রাজশাহী জেলা মৎস্য সম্পদে অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। আমরা জেলার প্রতিটি উপজেলায় উপযুক্ত প্রাকৃতিক জলাশয় চিহ্নিত করে অভয়াশ্রম বাস্তবায়নের জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করব।” তিনি মৎস্যজীবী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে অভয়াশ্রম রক্ষায় একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। মূল প্রবন্ধে তিনি প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে দেশীয় মাছের উৎপাদন কমে যাওয়া এবং জলজ জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, দূষণ এবং নিষিদ্ধ জালের ব্যবহারকে মৎস্য সম্পদ ধ্বংসের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
সংকট উত্তরণে প্রতিটি প্রাকৃতিক জলাশয়ের নির্দিষ্ট অংশকে অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে দেশীয় মাছের নিরাপদ প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি।
সপ্তাহব্যাপী এই আয়োজনের অংশ হিসেবে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মাছের পোনা অবমুক্তকরণ, মৎস্যচাষিদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক বিভিন্ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।#