স্টাফ রির্পোটার : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির বিজয় পূর্ণতা লাভ করে। বঙ্গবন্ধুর এই প্রত্যাবর্তনের ফলে বাংলাদেশ দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়।
দিবসটি উপলক্ষে রাজশাহীতে নগর আওয়ামী লীগ রোববার (১০ জানুয়ারি) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগর যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করে। কর্মসূচিসমূহের মধ্যে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে কুমারপাড়াস্থ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, মাইকযোগে নগরীতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার, সকাল ১০.৩০টায় দলীয় কার্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বরে বঙ্গবন্ধু সহ জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সকাল ১১টায় দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
বক্তব্য রাখেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহীন আকতার রেনী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইসতিয়াক আহম্মেদ লিমন।
সভাপতির বক্তব্যে এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় তৎকালিন রেসকোর্স ময়াদনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পনের মধ্যে দিয়ে তাদের পরাজয় স্বীকার করেছিলো। যার মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ লাভ করে। বাঙালি স্বীকৃতি পেয়েছিলো বীরের জাতি হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করে। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে লক্ষ লক্ষ জনতা হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় বরণ করে নেয়। সেদিন ঢাকায় লক্ষ লক্ষ মানুষ সমাবেত হয়েছিলো মহান মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-কে এক নজর দেখার জন্য এবং নেতার বক্তব্য শোনার জন্য।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু মাত্র তিন বছর সাত মাস দেশ পরিচালনা করেছিলেন। তিনি দেশ পূর্ণগঠনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছিলেন ঠিক তখনই ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র শুরু করে দিলো। সেইসময় একদিকে জাসদ গণবাহিনী গঠন করে গুপ্ত হত্যা, এদেশীয় পাকিস্তানি এজেন্ট রাজাকার-আলবদররা মুসলিম বাংলা কায়েমের নামে দেশে নানান ষড়যন্ত্র মেতে উঠল। পাটের গুদামে আগুন দেয়া, খাদ্য মজুদ করে খাদ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার নানান চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিলো। ইদের নামাজে বোমা হামলা করে মানুষ হত্যা ও কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের এমপিকে হত্যা করে দেশের আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো সহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছিলো এই স্বাধীনতা বিরোধীরা। ঐ স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিরা সু-কৌশলে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেছিলো।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া’র পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাক স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছিলো। স্বাধীনতার পরে মানিক মিয়ার মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে সেই পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে সংবাদ পরিবেশ করে মানিক মিয়া’র কু-সন্তান মইনুল হোসেন এর প্রত্যক্ষ মদদে। কুড়িগ্রামের মানসিক ভারসাম্যহীন বাসন্তি’র শরীরে মাছ ধরার জাল পড়িয়ে দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করার মতো নোংড়ামিতে মেতে উঠে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা। তাদের এহেন কর্মকান্ডই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ক্ষেত্র তৈরী করে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালিত করে। যার নেপথ্যের নায়ক ছিলো মেজর জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ মদদেই সেনাবাহিনীর উশৃঙ্খল সদস্যরা বঙ্গবন্ধুকে
সপরিবারে হত্যা করে। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর হত্যার দায় এড়াতে পারে না। কারণ জিয়াউর রহমানই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের সুবিধাভোগী।
তিনি আরও বলেন, একসময় যারা বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের দেশ হিসেবে কটুক্তি করতো, আজকে তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে সমীহ করছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আজ একটি বিস্ময়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবিলা করে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন আজ বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যার কারণে ঐ পাকিস্তানিরা, যারা আমাদের দেশকে শোষণ করেছিলো, আমাদের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিলো, ত্রিশ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছিলো, তিন লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানী করেছিলো, সেই পাকিস্তানির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যখন বলেন, আমাকে একটি বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। তার এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যে লক্ষ লক্ষ আত্মদান করেছিলো, তাঁদের আত্মা শান্তি পেয়েছে। এটাই বঙ্গবন্ধুর কন্যা, জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে আমাদের অর্জন।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আরও অনেক আগেই বাংলাদেশ পৃথিবীর উন্নত দেশে রুপান্তরিত হতো। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরে দেশ অনেক পিছিয়ে গেছিলো। দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন বলে কিছু ছিলো না। বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে বাংলার মানুষ গণতন্ত্র এবং ভোট ও ভাতের অধিকার পেয়েছে। তারা গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের শোষণমুক্ত সোনার বাংলা কায়েম হয়েছে। অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে রুপান্তরিত হবে। যার যাত্রা অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দেশের চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জননেত্রী শেখ হাসিনা’র হাতকে শক্তিশালী করার জন্য নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল হয়ে দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হবে। দলীয় নেতৃত্বের ভুল-ক্রুটি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা আহŸান জানিসয়ে বলেন, জনসম্মুক্ষে নেতৃত্বের সমালোচনা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং দল ও নেতৃত্বের ক্ষতি হয় এমন কোন বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত না করার আহŸান জানান।
ডাবলু সরকার বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্যে দিয়ে বাঙ্গালী স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করেছিলো। ৮ জানুয়ারি তখনও বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিলো। তিনি ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী’র প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে বাঙ্গালী জাতি বিজয়ী হয়েছিলো। সেই যুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে জাতীয় চার নেতার নেতৃত্বে হয়েছিলো। ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের মাটিতে নেমে আবেগে আপ্লæত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁকে দেখে উপস্থিত মানুষেরা আবেগে কেঁদে ফেলেছিলেন। তখন সকলেই আশাবাদী হয়েছিলো এই নেতাই একদিন সোনার বাংলাদেশ গড়বেন। এখন তাঁরই কন্যা, জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা সেই স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাচ্ছেন। সেই দিন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, অবাঙ্গালী সকলেই আমার ভাই ও বোন। তাদের রক্ষা করতে হবে। তাই হয়ত আজও বাংলাদেশে থাকা পাকিস্তানি এজেন্টরা বহাল তবিয়তে বাসবাস করছেন, বঙ্গবন্ধুর কারণেই। এটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ।
তিনি আরও বলেন, তৎকালিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ব্যঙ্গ করে তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যায়িত করেছিলেন। আজ সেই হেনরি কিসিঞ্জার তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, বাংলাদেশ একটি উন্নত ও সম্ভাবনার দেশ। বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল। আমরা আশাবাদী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তাঁরই কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করবেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগরের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, মাহফুজুল আলম লোটন, অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, রেজাউল ইসলাম বাবুল, ডাঃ তবিবুর রহমান শেখ, নাঈমুল হুদা রানা, বদরুজ্জামান খায়ের, যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, আসাদুজ্জামান আজাদ, কৃষি সম্পাদক মীর তৌফিক আলী ভাদু, দপ্তর সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম বুলবুল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ফিরোজ কবির সেন্টু, ধর্ম সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক রবিউল আলম রবি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুর রহমান রাজা, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মকিদুজ্জামান জুরাত, শিল্প ও বানিজ্য সম্পাদক ওমর শরীফ রাজিব, সাংস্কৃতিক সম্পাদক কামারউল্লাহ সরকার কামাল, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পাদক ডাঃ ফ ম আ জাহিদ, উপ-দপ্তর সম্পাদক পংকজ দে, কোষাধ্যক্ষ হাবিবুল্লাহ ডলার, সদস্য এনামুল হক কলিন্স, মোশফিকুর রহমান হসনাত, আশরাফ উদ্দিন খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ আব্দুল মান্নান, আব্দুস সালাম, ইসমাইল হোসেন, মজিবুর রহমানসহ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।