স্টাফ রিপোর্টার,বাঘা : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনে প্রচারণার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা দুই সাংবাদিকসহ নারী নেত্রীর উপর হামলা চালিয়েছে।
আহতরা হলেন, মাছরাঙা টেলিভিশন রাজশাহীর ক্যামেরাপারসন মাহফুজুর রহমান রুবেল এবং দিপ্ত টিভির ক্যামেরাপারসন রফিকুল ইসলাম।
জানা গেছে, শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) বেলা ২টার দিকে শাহাপুর ও পিয়াদাপাড়া এলাকায় বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর কর্মী-সমর্থকরা এই হামলা চালায়। এই হামলায় আহত হয় দুই সাংবাদিকসহ নারী নেত্রী। আহত সাংবাদিকরা হলেন, মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের রাজশাহী ক্যামেরাপারসন মাহফুজুর রহমান রুবেল ও দীপ্ত টিভির ক্যামেরাপারসন ইসলাম উদ্দিন।এতে রুবেলের মোবাইল ভেঙে ফেলা হয়েছে। এসময় রুবেলের ক্যামেরাটিও ছিনিয়ে নিয়ে ভাঙচুরের চেষ্টা চালানো হয়। গণসংযোগকারী রাজশাহী জেলা যুব মহিলা লীগের এক নারী কর্মীর শাড়ি ধরে টেনে-হেঁচড়ে তাকে লাঞ্ছিত করা হয় বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পরে স্থানীয় লোকজন গিয়ে দুই সাংবাদিক ও নারী নেত্রীকেসহ লাঞ্ছিতের শিকার যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের উদ্ধার করেন। তবে এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মাছরাঙা টেলিভিশন রাজশাহীর ক্যামেরাপারসন মাহফুজুর রহমান রুবেল বলেন, পেশাগত দায়িত্বপালনকালে আকস্মিকভাবে মুক্তার আলীর সমর্থকরা হামলা চালান। এসময় আমার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। হামলাকারীরা আমার মোবাইল সেটটি ভেঙে ফেলে। তারা আমার ক্যামেরাও ভাঙার চেষ্টা করে। এসময় দিপ্ত টিভির ক্যামেরাপারসন রফিকুল ইসলামকেও মারধর করা হয়। এমনকি আওয়ামী লীগ প্রার্থী শহিদুজ্জামান শহিদের পক্ষে প্রচারণা চালানোর কারণে রাজশাহী জেলা যুব মহিলা লীগের এক নারী নেত্রীকেও লাঞ্ছিত করে হামলাকারীরা। হামলার শিকার দুই সাংবাদিক প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বাঘায় যুব মহিলা লীগের নেত্রীরা নৌকার প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। ওই সময় বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকেরা নৌকার লিফলেট নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছিড়ে ফেলছিলেন। এই দৃশ্য তারা ভিডিও করছিলেন। আর তখনই বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকেরা তাদের ওপর আক্রমণ করে। এক সমর্থক তার গলা টিপে ধরে বলে, ‘সাংবাদিকের বাচ্চা তোকে আজ মেরেই ফেলব’। এরপর স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করেন।
প্রসঙ্গত, আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে অংশ নিয়েছেন শহীদুজ্জামান শাহীদ, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তোজাম্মেল হক এবং স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) বর্তমান মেয়র মুক্তার আলী নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
মুক্তার আলী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রাথী হলেও পুলিশ তাকে নানানভাবে সহযোগিতা করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদ।
তবে এ ব্যাপারে বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ব্যাপারে হামলার শিকার দুই সাংবাদিক অভিযোগ দিলে তা গ্রহণ করা হবে এবং ঘটনার সাথে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরইউজে’র প্রতিবাদ : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্বপালনকালে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য (আরইউজে) মাছরাঙা টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন মাহফুজুর রহমান রুবেল এবং দিপ্ত টিভির ক্যামেরাপারসন রফিকুল ইসলামের ওপর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়রপ্রার্থী মুক্তার আলীর সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে। এ হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আরইউজে।
শুক্রবার বিকালে সংগঠনটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। তা না হলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে জানিয়েছেন আরইউজে নেতৃবৃন্দ।
আরইউজের সভাপতি কাজী শাহেদ, সহসভাপতি শরীফ সুমন, সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রকি, কোষাধ্যক্ষ সরকার দুলাল মাহবুব, কার্যনির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান টুকু এবং সামাদ খান বলেন, অবিলম্বে ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা মনে করি, পরিকল্পিতভাবেই মেয়রপ্রার্র্থী মুক্তার আলীর সমর্থকরা দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাই হামলাকারীরা এর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। অবিলম্বে আমরা হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আরইউজে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে।
রাজশাহী প্রেসক্লাবের উদ্বেগ প্রকাশ : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে মাছরাঙা টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন মাহফুজুর রহমান রুবেল এবং দিপ্ত টিভির ক্যামেরাপারসন রফিকুল ইসলামের ওপর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি করেছে রাজশাহী প্রেসক্লাব।
শুক্রবার রাতে রাজশাহী প্রেসক্লাব সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসলাম-উদ-দৌলা এক বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ বলেন, এই ধরণের হামলা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি। আমরা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
10