বিশ্বের দীর্ঘতম অখণ্ড বালিয়াড়ি সমৃদ্ধ সৈকতের শহর কক্সবাজার। সৈকত তীরের বালিয়াড়ির একপাশে নীল জলরাশি অপর পাশে সবুজ পাহাড়। এরই মাঝে ভাঙনের কবল থেকে তীররক্ষায় লাগানো হয়েছে সারি সারি ঝাউগাছ। পাহাড়ের পাদদেশ ও ঢেউয়ের ছোঁয়া লাগা তীর ছুঁয়ে টেকনাফ পর্যন্ত গড়ে উঠেছে প্রশস্ত মেরিন ড্রাইভ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পগুলোর অন্যতম ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক।
মেরিন ড্রাইভ সড়কের মধ্য দিয়ে কক্সবাজার-টেকনাফের দূরত্ব যেমন কমেছে তেমনি সমুদ্র তীরকে করেছে নয়নাভিরাম। সড়কটি দিয়ে চলা শুরু করলে মনে অন্যরকম আনন্দ জাগে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলায় মেরিন ড্রাইভ ঘিরে বিকশিত হচ্ছে পর্যটন শিল্প। ফলে কলাতলী ছাড়িয়ে সড়কটির পাশ ধরে ধীরে ধীরে টেকনাফ পর্যন্ত গড়ে উঠেছে পর্যটনসেবী তারকা-নন তারকা প্রতিষ্ঠান। এতে বিদেশের পরিবর্তে কক্সবাজারকে প্রথম পছন্দের তালিকায় রাখছেন ভ্রমণপ্রেমীরা।
বছরে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হওয়ায় পর্যটন শিল্প বিকাশে এক দশক ধরে নানামুখী কর্মসূচি পালন করছে সরকার। পর্যটন ঘিরে গড়ে উঠছে গভীর সমুদ্রবন্দর, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামসহ নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। পর্যটন বর্ষসহ নানা উদ্যোগে দিন দিন কক্সবাজারে বিশ্বমানের পর্যটন বিকশিত হওয়ায় বাঁকা চোখে দেখে প্রতিবেশী অনেক দেশ। মেরিন ড্রাইভ সড়কটিকে ‘ক্রসফায়ারের’ নিরাপদ জোন বানিয়ে বিকশিত পর্যটনকে বাধাগ্রস্ত করার পরিকল্পনায় হাঁটছিলেন টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ- এমন অভিযোগ পর্যটনসেবীদের।
কক্সবাজারের পর্যটনসেবী আনম খায়রুল এনাম, রিয়াদ ইফতেখার, কলিম উল্লাহসহ আরও অনেকের ভাষ্য, পর্যটকরা যত নিরাপদে চলাচল এবং অবস্থান করতে পারে ততই সেখানকার পর্যটন বিকশিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়েক কিলোমিটার সমুদ্র নিয়ে নিরাপদ ট্যুরিস্ট জোন গড়ে পর্যটন ঘিরে বিপুল মুদ্রা আয় করা হয়। সেক্ষেত্রে ১২০ কিলোমিটার অখণ্ড সৈকত হয়েও পিছিয়ে রয়েছে কক্সবাজার। বিশ্বময় পর্যটন বিকশিত শিল্প সম্পর্কে সরকার বুঝতে পারায় গত দেড় দশক থেকে কক্সবাজারে পর্যটন বিকাশে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়।
চলমান সময়ে মেরিন ড্রাইভ সড়কটি পর্যটনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভ্রমণে আসা পর্যটকরা সড়কটিতে পা না ফেলে যান না। কিন্তু বিগত বছর দুয়েক ধরে সড়কটি ‘ক্রসফায়ার জোন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা ও অন্য প্ল্যাটফর্মে ‘ক্রসফায়ার’ থেকে সড়টিকে মুক্ত রাখার দাবি তোলা হলেও কেউ কানে তোলেননি। ফলে পর্যটকদের মাঝে বেড়ে যায় আতঙ্ক। সেই সঙ্গে সড়কটিতে কমে যায় পর্যটকদের পদচারণা।
২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর টেকনাফ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে প্রদীপ কুমার দাশের যোগদানের পর থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক আতঙ্কের জোনে পরিণত হয়। দুই বছরে এই সড়কে ‘ক্রসফায়ারে’ শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। মাদক নির্মূলের নামে ‘ক্রসফায়ারে’ মানুষ হত্যা করা ছিল ওই এলাকার নিত্যদিনের ঘটনা। এই উন্মাদনা থেকে বাঁচতে পারেননি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানও।