অনলাইন ডেস্ক : কমনওয়েলথ জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে ২০ জুন ২০২৫ প্রকাশিত ‘দ্য ট্রথ উইল আউট: হ্ওা প্রেস ফ্রিডম ইজ সাপ্রেস্ড ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি নিবন্ধের জবাবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার একটি প্রতিবাদপত্র প্রকাশ করেছে।
উইলিয়াম হরসলি নামের কমনওয়েলথ জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য এই নিবন্ধটি লিখেছেন।
প্রতিবাদপত্রটি আজ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ (সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস)-এ প্রকাশ করা হয়।
নিচে সম্পূর্ণ প্রতিবাদপত্রের বাংলা অনুবাদ দেওয়া হলো:
উইলিয়াম হরসলির সাম্প্রতিক নিবন্ধে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফর এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে গণমাধ্যম দমন করার অভিযোগ একটি অত্যন্ত জটিল রাজনৈতিক রূপান্তরকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত পূর্ববর্তী স্বৈরশাসনের পর ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে খাটো করে দেখিয়েছে।
গণবিক্ষোভ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে সাবেক সরকারের পতনের পর, নৈতিক কর্তৃত্ব, নিরপেক্ষতা ও সংস্কারের দাবিতে জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, কোনো রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নয়।
১১ জুন চ্যাথাম হাউসে দেয়া এক বক্তৃতায়, অধ্যাপক ইউনূস তিন দফা এজেন্ডা তুলে ধরেন: ১. স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ২. গুরুতর অপরাধের বিচারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং ৩. একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন।
এই লক্ষ্যগুলো ক্ষমতা দখলের ইঙ্গিত নয়, বরং তা জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি।
বাংলাদেশ ও গণআন্দোলনের সঙ্গে সহমর্মী অনেক পর্যবেক্ষক গণমাধ্যম ও গ্রেপ্তারের প্রশ্নে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এসব উদ্বেগকে সরকার গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। তবে সরকারকে অতীতের স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের মতো আচরণকারী বলে চিত্রায়ণ বাস্তবতা ও কার্যক্রমের মৌলিক পার্থক্যকে অস্বীকার করে।
হ্যাঁ, বর্তমানে বহু মামলা বিচারাধীন, যার অনেকগুলো ভুক্তভোগী বা তাদের পরিবার কর্তৃক দায়ের করা হয়েছে। এর কিছু হয়তো ত্রুটিপূর্ণ বা ভিত্তিহীন।
কিন্তু এগুলো আগের মতো রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপে পরিচালিত হচ্ছে না। সরকার কাউকে বন্দি করার জন্য কোনো রাজনৈতিক নির্দেশনা দিচ্ছে না।
বরং পুলিশ ও প্রসিকিউশন বিভাগকে সতর্কতা, প্রমাণ ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা শ্রদ্ধার সঙ্গে মেনে চলা হচ্ছে। যেখানে আগে এর অপব্যবহার হতো, সেখানে এখন পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে।
সরকার ইতোমধ্যে ১৬,৪২৯টি ভিত্তিহীন মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যা ন্যায়বিচার ও আস্থা পুনরুদ্ধারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এসব মামলা রাজনৈতিক প্রতিশোধের ফল ছিল। যেসব ক্ষেত্রে যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ হয়নি, সেগুলো বাতিল করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপ দায়বদ্ধতা ও মানবিকতার প্রকাশ এবং একটি অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির প্রতিশ্রুতি।
কেউ যদি প্রশ্ন তোলে কেনো সরকার বিতর্কিত মামলায় হস্তক্ষেপ করছে না, তার উত্তর হলো: হস্তক্ষেপ করলে আমরা আগের সরকারের পথেই হাঁটতাম। আগের মতো বিচার আগেই নির্ধারিত থাকত, ন্যায়বিচার নয়, রাজনৈতিক আনুগত্য থাকত মূল বিবেচ্য।
এই ভুল অন্তর্বর্তী সরকার করতে চায় না। বরং বিচারব্যবস্থা ও পুলিশ সংস্কারের লক্ষ্যে পৃথক কমিশন গঠন করা হয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস লন্ডনে বলেছিলেন, ‘মানুষের জীবনে কখনও এত স্বাধীনতা ছিল না’। কথাটি কারো কাছে অতিরঞ্জিত মনে হতে পারে। তবে যারা দীর্ঘকাল নিপীড়নের মধ্যে থেকেছেন, তাদের কাছে এটি একটি বাস্তব অনুভব।
এখনও সব কিছু সমাধান হয়নি, তবে প্রথমবারের মতো ন্যায়বিচার ও রাজনীতিকে আলাদা করার এক আন্তরিক প্রচেষ্টা চলছে।
সাবেক আমলে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মাধ্যমে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও অধিকারকর্মীদের দমন-পীড়ন পরিচালিত হতো। এখন সেই কাঠামো ভাঙার চেষ্টা চলছে, যদিও তা সহজ নয়, এবং অগ্রগতি সবসময় সরলরৈখিক হয় না।
অন্তর্বর্তী সরকার জানে তাদের সামনে পথ দীর্ঘ ও কঠিন। কিন্তু তারা আইনের শাসন, রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও জাতীয় পুনর্মিলন নিশ্চিত করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। এটাই এই পরিবর্তনের মুহূর্তের প্রতিশ্রুতি, এবং এটাই তাদের দায়িত্ব।-বাসস