অনলাইন ডেস্ক : ‘প্রকৃত জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করা এক দল তরুণের সঙ্গে হাতাহাতি আর পুলিশের লাঠিপেটার পর শাহবাগ ছাড়লেন জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের দাবিতে অবরোধ চালিয়ে আসা আন্দোলনকারীরা।
শুক্রবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে শাহবাগ মোড় থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকেও কিছুটা লাঠিপেটা করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এর ফলে দীর্ঘ ৩২ ঘণ্টা পর শাহবাগ ও আশপাশের এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়া ‘প্রকৃত’ জুলাই যোদ্ধাদের একজন আব্দুল খালেক বলেন, ‘সরকার যদি সনদ না দেয়, আমরা ৫ তারিখে আবার নামব। কিন্তু দিনের পর দিন মানুষকে কষ্ট দিয়ে আমরা আন্দোলন করতে চাই না। এরা কিছু স্বার্থ নিয়ে এখানে বসেছিল।’
এর আগে দেখা গেছে, শাহবাগ মোড় জুড়ে ব্যানার, ফেস্টুন হাতে বসে ছিলেন ‘জুলাইযোদ্ধা সংসদ’-এর সদস্যরা। তারা স্লোগান দিচ্ছিলেন—‘জুলাই সনদ দিতে হবে’, ‘টালবাহানা চলবে না’, ‘অন্তর্বর্তী সরকার জবাব দাও’। এর ফলে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, কাঁটাবন ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়সহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। হাসপাতালে যাওয়ার পথে রোগী ও স্বজনদেরও চরম ভোগান্তিতে পড়তে দেখা যায়।
এদিকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ‘প্রকৃত জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করা একদল তরুণ এসে শাহবাগ থেকে অবরোধকারীদের সরে যেতে বলেন। ওই তরুণরা ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলেন। অবরোধকারীদের উদ্দেশ্যে তারা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন। তারা অবস্থানকারীদের মাইক বন্ধ করতে বলেন। সড়কে বিছানো ত্রিপল সরিয়ে ফেলতে দেখা যায় সেসময়।
একপর্যায়ে অবরোধকারীরাও তরুণদের দলটিকে ‘ভুয়া’ আখ্যা দেন। উভয় পক্ষ একে অপরের ‘জুলাই যোদ্ধার’ পরিচয়পত্র দেখতে চায়। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার মধ্যে কয়েকদফা হাতাহাতি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে এবং অবরোধকারীদের কয়েকদফা লাঠিচার্জ করে। এরপর শাহবাগ অবরোধকারীদের বানানো মঞ্চটি ভেঙে ফেলা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘দুই দিন ধরে অবরোধ চলছে, মানুষ অতিষ্ঠ। এখন বুঝতে পারছি, যারা আজ এসে সরিয়ে দিল, তারাই আসল। তারা গুলির চিহ্ন দেখিয়েছে, পরিচয়পত্র দেখিয়েছে।’
শাহবাগ অবরোধকারীদের একজন মো. ইয়াছিন বলেন, আমার পিঠে পুলিশ পিটিয়েছে। পিজি হাসপাতাল থেকে একদল এসে আমাদের ওপর হামলা করে আমাদের মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আহত থাকলেও অধিকাংশ বাইরের, যারা আমাদের আন্দোলনকে সফল হতে দিতে চায় না।
আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা সৌরভ বলেন, আমাদের ওপর পুলিশ আর আহতদের আরেকটি দল একসঙ্গে হামলা করেছে। আমাদের দুইজন এখন হাসপাতালে ভর্তি। অনেকে আহত। আমরা রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হচ্ছি এখন। পরবর্তীতে আমাদের কর্মসূচি জানিয়ে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, ‘আমরা খুব বেশি লাঠিপেটা করিনি। যারা এসে অবরোধকারীদের সরিয়ে দিয়েছেন, তারা দাবি করেছেন—ভুয়া পরিচয়ে কেউ শাহবাগ অবরোধ করে থাকলে প্রকৃত যোদ্ধাদের সুনাম নষ্ট হয়। ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে, আর তা দেখে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রকৃত আহত তরুণেরা শাহবাগে এসে তাদের উঠিয়ে দিয়েছেন। দুই পক্ষ যেন বড় ধরনের কোনো ঝামেলা না হয় পুলিশ সেটা দেখেছেন।’-ইত্তেফাক