স্টাফ রিপোর্টার : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ, এম, এম, নাসির উদ্দিন বলেছেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা একটি ঐতিহাসিক ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। আমরা উনার প্রতিশ্রুতির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছি এবং উনার প্রতিশ্রুতি যেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয় সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
আজ শনিবার (২৩ আগস্ট) সকালে রাজশাহী আঞ্চলিক লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (আরপিএটিসি) মিলনায়তনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত রাজশাহী অঞ্চলের নির্বাচন কর্মকর্তাগণের সাথে মতবিনিময় সভার পূর্বে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি কোন পর্যায়ে-সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভোটার তালিকার যে বিশাল দায়িত্ব আমাদের ওপরে ছিল তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ৭৭ হাজারের অধিক কর্মীকে প্রশিক্ষণের পরে আমরা কাজে লাগিয়েছি। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেছি। প্রায় ২১ লাখের মতো মৃত ভোটার সনাক্ত করে বাদ দিয়েছি। এসময় প্রায় ৪৪ লাখের মতো ভোটার হওয়ার যোগ্য নাগরিককে চিহ্নিত করেছি। সবমিলিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ হয়ে গেছে। আমাদের ভোটকেন্দ্র বাছাইয়ের কাজ চলছে। আমার এখানে আগমন মূলত ভোটকেন্দ্র বাছাই ও আঞ্চলিক পর্যায়ের প্রস্তুতি দেখার জন্য।
সীমানা নির্ধারণ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সীমানা নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। সীমানা নিয়ে আমরা পনেরো শত আপত্তি পেয়েছিলাম। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যতটুকু গ্রহণযোগ্য মনে করেছি তার খসড়া প্রকাশ করেছি। আগামী রোববার (২৪ আগস্ট) থেকে শুনানি শুরু হচ্ছে যা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে।
পিআর পদ্ধতি বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল দাবি করলেও এটা আমাদের সংবিধানে নেই, কোনো আইনেও নাই। এটি রাজনৈতিক আলোচনার বিষয়। তর্ক-বিতর্ক চলছে। আমরা এই বিতর্কে যেতে চাই না। আমরা শাসনতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত, তাই এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা বিষয়ক অপর প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দিন বলেন, যারা ভোটকেন্দ্র দখল করার জন্য নিয়ত নিয়ে বসে আছেন তাদের স্বপ্নভঙ্গ হবে। আপনারা ভোট কেন্দ্র দখলের ইতিহাস ভুলে যান। ভোটবাক্স দখলের নিয়ত থাকলে দয়া করে সরে আসুন। আমরা অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে থাকবো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আপনাদের সাথে নিয়ে আমরা তাদের প্রতিরোধ করব।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলবে। চব্বিশের ৫ আগস্টের চেয়ে বর্তমান পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। ভোটের সময় আসতে আসতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো উন্নত হবে। একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনের জন্য যে প্রতিশ্রুতি জাতিকে দিয়েছি তা পালনে আমরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করবো। ভোটকেন্দ্র দখল নিয়ে বিশৃঙ্খলা হলে পুরো কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে দেওয়ার বিধান চালু করেছি সুতরাং কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হলে পুরো কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে করে স্ট্রাইকিং ফোর্স ফুল স্ট্রাইকে যেতে পারে। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীকেও আমরা অন্তর্ভুক্ত করব। আমরা সর্বোপরি জনগণকে সাথে নিয়ে আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে চাই। আমরা কোনো দলের পক্ষে নই। আমরা পৌনে ১৩ কোটি ভোটারের পক্ষে, ১৮ কোটি জনগণের পক্ষে।
নির্বাচনী দায়িত্ব প্রদান প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, যারা অতীতে নির্বাচনী অনিয়মের সাথে সম্পৃক্ত ছিল তাদের পদায়নের প্রশ্নই আসে না। এমনকি নির্বাচন কমিশনেও যারা স্বপ্রণোদিতভাবে জড়িত ছিল তাদের কাউকে দায়িত্বে রাখবো না। যথাসম্ভব সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচনের জন্য খোঁজ-খবর নিয়ে যোগ্য কর্মকর্তাকে পদায়নের ব্যবস্থা করছি।
এসময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভোটদানে মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে এবং অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা কামনা করেন।