অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, ধর্মীয় সম্প্রীতি যেন অক্ষুণ্ন থাকে এবং কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
তিনি আরো বলেন, দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ১ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পূজা মণ্ডপ, মন্দির ও আশপাশের এলাকায় কড়া নজরদারি চালানো হয়েছে। এবার সারাদেশে ৩১ হাজার ৬০৬টি পূজা মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। দেশজুড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার পুলিশ সদরদপ্তরে আয়োজিত প্রেস কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, এ পর্যন্ত ৪৯টি ছোটখাটো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫টি মামলা হয়েছে এবং ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কয়েকজন আসামি ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। এসব ঘটনার পেছনে কারা থাকছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আইজিপি জানান, পূজাকেন্দ্রিক গুজব ছড়ানো রোধে পুলিশ সদর দপ্তরের সাইবার ইউনিট বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছে। পুরনো ভিডিও বা ছবি নতুন করে ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার চেষ্টা হলে তা শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আইজিপি আরো বলেন, আমরা একটি ট্রানজিশনাল সময় পার করছি। সামনে নির্বাচন, এই প্রেক্ষাপটে কেউ যেন ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করে, এমন চেষ্টায় লিপ্ত না হয় সেজন্য আমরা সজাগ আছি। পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় সার্বিক পরিস্থিতির ওপর বিশেষ নজরদারি চলছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা এবার পূজাকে ছোট-বড় বা গুরুত্বপূর্ণ-অগুরুত্বপূর্ণ এভাবে ভাগ করিনি। প্রতিটি মণ্ডপকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, এমনকি দুর্গম এলাকার পূজা মণ্ডপেও পুলিশি নজরদারি নিশ্চিত করা হয়েছে।
সম্প্রতি গাজীপুরে মূর্তি ভাঙচুরের একটি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে আইজিপি বলেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে এসব ঘটছে। তবে, এসব ইস্যুকেও আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। পুলিশ বাহিনীর কেউ এসব ঘটনায় জড়িত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
গত বছরের জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৫৫টি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১৮টি হত্যা মামলায় ১ হাজার ৯৪১ জন আসামি রয়েছে। আর অন্যান্য ৩৭টি মামলায় ২ হাজার ১৮৫ জন আসামি রয়েছে।
জুলাই-আগস্ট মাসের ঘটনায় ১ হাজার ৭০০টির বেশি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ৭৬৬টি হত্যা মামলা এবং ৯৭৪টি অন্যান্য মামলা। অধিকাংশ মামলার তদন্ত চলমান। নবীন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি অভিজ্ঞ কর্মকর্তারাও এসব মামলার তদন্ত করছেন বলে জানান তিনি।
মিথ্যা মামলা কিংবা নিরীহ ব্যক্তিকে আসামি করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, এসব মামলায় যারা প্রকৃতপক্ষে জড়িত নন তাদের নাম বাদ দেওয়ার কথা বলেছে সরকার। পুলিশের কেউ যদি এসব অপকর্মে জড়িত থাকে, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি পার্বত্য এলাকায় ঘটে যাওয়া ধর্ষণের একটি ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে আইজিপি জানান, ঘটনার খবর পাওয়ার পর-পরই একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভুক্তভোগী মেয়ের বাবা তার নাম উল্লেখ করেছেন এবং আরো ২ থেকে ৩ জনের সম্পৃক্ততার কথাও বলেছেন। ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করেছি এবং মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই ঘটনায় পুলিশ কোনোভাবেই গাফিলতি করছে না। তদন্ত চলছে, বাকি অভিযুক্তদেরও শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তা সত্ত্বেও এই ঘটনাকে ঘিরে কিছু মহল অযথা উত্তেজনা ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত আইজি (প্রশাসন) এ কে এম আওলাদ হোসেন, অতিরিক্ত আইজি (অর্থ) মো. আকরাম হোসেন, অতিরিক্ত আইজি (এইচআরএম) আবু নাছের মোহাম্মদ খালেদ, অতিরিক্ত আইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজি (লজিস্টিকস অ্যান্ড অ্যাসেট অ্যাকুইজিশন) মোসলেহ উদ্দিন আহমদ, অতিরিক্ত আইজি (ডেভেলপমেন্ট) সরদার নূরুল আমিন প্রমুখ।