অনলাইন ডেস্ক : ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ত্যাগ করবে না ইরান। একইসঙ্গে নিজেদের এই পারমাণবিক কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেছে দেশটি। আর এরই জেরে ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে আবার হামলা করা হবে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় বড় ধরনের ক্ষতি হলেও ইরান তাদের পরমাণু কর্মসূচি ত্যাগ করবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। তিনি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণকে ইরানের জাতীয় গর্বের অংশ হিসেবেও উল্লেখ করেন।
ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আরাগচি বলেন, “এই মুহূর্তে সমৃদ্ধকরণ বন্ধ আছে, কারণ হামলায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এটাকে পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া বা ত্যাগ করা আমাদের জন্য অসম্ভব, কারণ এটা আমাদের নিজস্ব বিজ্ঞানীদের অর্জন।”
তিনি বলেন, ভবিষ্যতের যেকোনও পরমাণু চুক্তিতেই ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার থাকা উচিত।
এর আগে গত ২২ জুন মার্কিন বিমান হামলায় ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। যার মধ্যে ভূগর্ভস্থ ফোর্দো কেন্দ্রটিও ছিল। মূলত ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের ১২ দিনের যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় ওই হামলা চালানো হয়েছিল।
আরাগচি স্বীকার করেন, এসব স্থাপনায় “গভীর ক্ষতি” হয়েছে, তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন— ইরানের পারমাণবিক জ্ঞান বা প্রযুক্তি ধ্বংস হয়নি। তার ভাষায়, “এই প্রযুক্তি আমাদের নিজস্ব। আমাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বাইরের কিছু নয় যে বোমা ফেলে ধ্বংস করা যাবে।”
এদিকে ইরানের এই বক্তব্যের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের ইরানে হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন, “আমি যা বলেছিলাম, তা-ই করেছি। আর প্রয়োজনে আবারও করবো!”
পরে তিনি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর একটি প্রতিবেদন নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এতে বলা হয়েছিল, মার্কিন হামলা ইরানের কর্মসূচিকে মাত্র কয়েক মাসের জন্য বিলম্বিত করতে পেরেছে। তিনি সেই প্রতিবেদনের সাংবাদিককে বরখাস্ত করার দাবিও তোলেন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগচি আরও জানান, ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা এখনো খতিয়ে দেখছে হামলায় পারমাণবিক উপকরণ ও অবকাঠামোর কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। তবে তিনি পরিষ্কার করে বলেননি, কতটা সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রক্ষা করা গেছে।
আরাগচি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি না হলেও ইরান আলোচনায় বসতে প্রস্তুত— যদি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। তিনি বলেন, “আমরা যে কোনও বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত, যাতে প্রমাণ করা যায় আমাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ।”
তিনি আরও জানান, ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও ইরান তার ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন চালিয়ে যাবে। ইরানের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের হাতে এখনো প্রচুর ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যা দিয়ে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।”