অনলাইন ডেস্ক : ইতিহাস বদলে দেওয়া গণ-অভ্যুত্থান দিবস আজ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের এদিনে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার সম্মিলিত আন্দোলনে শাসকের মোড়কে জড়িয়ে থাকা এক দানবের পতন হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্ষমতার মসনদে চেপে বসা ১৬ বছরের স্বৈরাচারের অবসান হয়। পরবর্তীতে ৫ আগস্টকে গণ-অভ্যুত্থান দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেয় সরকার। ইতোমধ্যে দিবসটি পালনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এ উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়াও প্রধান উপদেষ্টা মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন। রাজনৈতিক দলগুলোও এ দিবসে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
কোটা সংস্কার দাবিতে গত বছর ১ জুলাই শুরু হয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেপরোয়া গুলি, গণগ্রেফতার এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলা ও সংঘর্ষ একপর্যায়ে সরকার পতনের একদফা দাবিতে রূপ নেয়। আন্দোলনটা কোটা দিয়ে শুরু হলেও তা শেষ হয় হাসিনার পতনে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট কারফিউ ভেঙে গণভবন অভিমুখে লাখো মানুষের ঢল নামলে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। সারাবিশ্বে এই আন্দোলন জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নামে পরিচিতি পায়। এরপর ৬ আগস্ট দুপুরে বঙ্গভবন থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, তিন বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এক তরফাভাবে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একচ্ছত্র সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেন শেখ হাসিনা। অর্থাৎ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ মাত্র ছয় মাসের মাথায় ভেঙে দেওয়া হয়।
ভারতের সমর্থনে টানা ১৬ বছর দেশের ওপর চেপে বসেছিল ভয়ংকর স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। তার ফ্যাসিবাদী শাসন আমলে মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। এর বিরুদ্ধে জেগে ওঠেন ছাত্র-জনতা। তবে আন্দোলন দমাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড চালান হাসিনা। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের (ওএইচসিএইচআর) ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্টে বলা হয়, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ঘটনায় ১১৮ শিশুসহ এক হাজার ৪০০ জনকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। শিশু হত্যার হার ১২-১৩ শতাংশ। আহত হয়েছেন প্রায় ১২ হাজার। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এই নৃশংস পথ বেছে নেন হাসিনা।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি
এদিকে আওয়ামী ‘ফ্যাসিবাদ’ পতনের স্মারক হিসাবে আজ ও আগামীকাল দেশব্যাপী বিজয় র্যালি করবে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজ দেশের সব থানা ও উপজেলায় এবং আগামীকাল সব জেলা ও মহানগরে র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে আগামীকাল বেলা ২টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিজয় র্যালি বের হবে।
আজ গণমিছিল করবে জামায়াতে ইসলামী। রাজধানীর মহাখালী কলেরা হাসপাতালের সামনে থেকে সকাল ১০টায় মিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। স্বৈরাচার পতন দিবস পালন করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে দিনব্যাপী নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করবে দলটি। এতে রয়েছে সকাল ১০টায় গণসমাবেশ, দুপুর ১২টায় গণমিছিল ও আড়াইটায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান দিবসে বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোট সমাবেশ করবে।