পিন্টু আলী, চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি: গত ২৬ জুন দুপুরে বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের বামনদিঘী গ্রামের দবির উদ্দিনকে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে ইসিজি মেশিন নেই। রোগীকে বাইরে থেকে ইসিজি করিয়ে আনতে বলা হয়। দ্রুত বাইরে থেকে ইসিজি করিয়ে ফিরলে চিকিৎসক দবির উদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন।
দবির উদ্দিনের মেয়ে নাহিদা আক্তার বলেন, “হাসপাতালে যদি ইসিজি মেশিন থাকতো, হয়তো আমার বাবা সময়মতো চিকিৎসা পেতেন।”
এ ঘটনা একক নয়। প্রতিদিন শত শত রোগী বিভিন্ন সমস্যায় হাসপাতালে আসছেন, কিন্তু পাচ্ছেন না প্রয়োজনীয় চিকিৎসা।
শনিবার সকাল ৯টার সময় চারঘাট হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন ছিদ্দিক, শাহীনুর রহমান, রেহেনা খাতুনসহ অনেকেই। তারা জানান, নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও চিকিৎসকদের কক্ষ বন্ধ থাকে, কেউ দায়িত্বে থাকেন না।
৪ জুলাই রুমানা বেগম (৪০) রাতে বুকে ব্যাথা উঠলো অটোচালক স্বামী পিয়ারুল ইসলাম তাকে চারঘাট হাসপাতালে নিয়ে আসেন। জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বাইরে থেকে ইসিজি করিয়ে ৩তলায় নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে জানায় আমাদের হাসপাতালে কোনো হার্টেও সমস্যার চিকিৎসা হয় না এমন সমস্যা হলে সরাসরি রাজশাহী মেডিকেলে নিয়ে যাবেন।
তিন বছর আগে ৩১ শয্যার চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের মে মাসে, যা শেষ হওয়ার কথা ছিল এক বছরের মধ্যে। দীর্ঘ দিন পরে ভবনটি হস্তান্তর করা হলেও কার্যক্রম নেই।
ভবন চালু হলেও এক্স-রে, ইসিজি, সনোগ্রাফি যন্ত্রপাতি থাকলেও চালু করা হয়নি এখন পর্যন্ত। রেডিওলজিস্ট আবু তাহের জানান, দুই বছর ধরে এসব সেবা বন্ধ, অথচ রোগীরা প্রতিদিন ফিরছেন খালি হাতে।
চিকিৎসক সংকটও চরমে। ৩১টি পদের বিপরীতে মাত্র ৭ জন চিকিৎসক কর্মরত। মেডিসিন, কার্ডিওলোজি, সার্জারি, ইএনটি, অর্থপেডিক্স, অপথালমোলজি বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই। পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৫ জনের মধ্যে আছেন মাত্র একজন। আয়ার পদও শূন্য।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা পৌর এলাকার বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “মেডিসিন ডাক্তার নেই, বাধ্য হয়ে রাজশাহীতে যেতে হচ্ছে। প্রাইভেট ক্লিনিকে হাজার টাকার ভিজিট দিয়ে চিকিৎসা আমার পক্ষে সম্ভব না।”
শলুয়া এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, “ছেলে গাছ থেকে পড়ে আহত হয়েছে। এক্স-রে করতে বলেছে, কিন্তু হাসপাতালেই পরীক্ষা হয় না। বাইরে ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছি।”
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চারঘাট শাখার সভাপতি কামরুজ্জামান বলেন, “সারাদেশে একসময় সেবায় সেরা ছিল চারঘাট হাসপাতাল। আর জনবল সংকটে সেই হাসপাতাল কার্যত বন্ধ হওয়ার পথে।”
চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তৌফিক রেজা বলেন, “চিকিৎসক সংকটের কারনে সেবা দিতে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। অন্য যে অভিযোগের বিষয়ে বললেন সেগুলোর বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।