অনলাইন ডেস্ক : তিন বছরের যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে সোমবার ইস্তাম্বুলে বৈঠক করবেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এসময় দুই পক্ষই তাদের নিজ নিজ পরিকল্পনা তুলে ধরবে।
এর আগে, রাশিয়ার ভেতরে বিমানঘাঁটিতে রাখা কয়েক ডজন কৌশলগত বোমারু বিমান ধ্বংসের দাবি জানায় কিয়েভ।
ইস্তাম্বুল থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানে প্রায় তিনবছর পর প্রথমবারের মতো সরাসরি আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে মস্কো ও কিয়েভ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু সরাসরি আলোচনা হলেও, তা দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল।
সোমবারের বৈঠকের ঠিক আগের দিন, ইউক্রেন তাদের ইতিহাসের অন্যতম সাহসী ও সফল অভিযান পরিচালনায় তথ্য জানিয়েছে। শত শত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাশিয়ার ভেতরে বিমানঘাঁটিতে রাখা ডজনখানেক কৌশলগত বোমারু বিমান ধ্বংসের দাবি করেছে কিয়েভ।
গত মাসে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার আলোচনায় বড় পরিসরে বন্দিবিনিময় ও শান্তিচুক্তি নিয়ে পারস্পরিক দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময়ে সম্মত হয় দুই দেশ।
দ্বিতীয় দফার আলোচনা স্থানীয় সময় দুপুর ১ টায় ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক চিরাগান প্যালেসে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বসফরাসের তীরে অবস্থিত প্রাক্তন অটোমান রাজপ্রাসাদটি বর্তমানে একটি পাঁচ তারকা হোটেল।
রাশিয়া বলেছে, আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা তাদের শান্তির শর্তাবলীর সম্বলিত ‘স্মারকলিপি’ উপস্থাপন করবে। তবে ইউক্রেন আগেই চায়নি এই শর্তগুলো আগেভাগে জানানো হোক।
জোরদার কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত থাকার পরেও যুদ্ধবিরতি বা দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির বিষয়ে উভয় পক্ষই আলাদা অবস্থানে রয়েছেন।
আলোচনার আগে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের জন্য আবারো আহ্বান জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে তিন দফা শান্তির প্রস্তাবও তুলে ধরেন তিনি। সেগুলো হলো, ‘প্রথমত- পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি, দ্বিতীয়ত- বন্দীদের মুক্তি এবং তৃতীয়ত- অপহৃত শিশুদের ফিরিয়ে আনা’।
জেলেনস্কি আরো বলেন, ‘মূল সমস্যাগুলো সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে কেবল নেতারাই সমাধান করতে পারেন’। তাই তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের আহ্বান জানান।
যদিও ক্রেমলিন বারবার সেই সম্ভাবনার বিরোধিতা করে আসছে। তারা বলেছে, পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠক তখনই সম্ভব হবে, যখন দুই দেশের আলোচকরা একটি বৃহত্তর চুক্তির কাঠামোতে পৌঁছাবে।
যুদ্ধের পুরো সময়টাতেই জেলেনস্কির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাশিয়া এবং বারবার তাকে উৎখাতের দাবি করে আসছে।
মস্কো বলেছে, যুদ্ধ বন্ধ করতে সংঘাতের ‘মূল কারণগুলো সমাধান করতে চায় তারা। যার মধ্যে রয়েছে, ইউক্রেনের সামরিক শক্তি সীমিত রাখা, দেশটিকে ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং বিশাল আকারের ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর।
কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো এই দাবিগুলো সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং রাশিয়ার আক্রমণকে সাম্রাজ্যবাদী ভূমি দখলের চেষ্টা বলেও অভিহিত করেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। পাশপাশি ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল এলাকা ধ্বংস হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।