স্টাফ রিপোর্টার : কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চামড়া সংরক্ষণে দুর্নীতি ও অপচয় রোধে রাজশাহী জেলায় নেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। চামড়া ব্যবসার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে সরকার রাজশাহীতে ২৬৩.৩ মেট্রিক টন লবণ বরাদ্দ দিয়েছে, যা মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংগুলোর মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার জানান, “ঈদ-উল-আযহাকে কেন্দ্র করে চামড়া একটি বড় বিজনেস হয়ে উঠেছে। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে এই খাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যবসাটি প্রায় ধ্বংস হওয়ার পথে। তাই রুট লেভেলে এই শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকার এবার বড় ও সময়োপযোগী উদ্যোগ নিয়েছে।”
তিনি বলেন, “চামড়ার অপচয় রোধে ঈদের পর প্রথম ১০ দিন কোনো পশুর চামড়া রাজশাহী জেলার বাইরে নিতে দেওয়া হবে না। এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় একযোগে কার্যকর থাকবে। এই সময়ের মধ্যে স্থানীয়ভাবে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হবে, যাতে বাজার স্থিতিশীল থাকে এবং ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে না পড়েন।”
জেলা প্রশাসক আরও জানান,“বরাদ্দকৃত লবণ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রয়োজন অনুসারে বিতরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে লবণ ক্রয় ও বিতরণ কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।”
লবণ বরাদ্দের পরিমাণ (উপজেলাভিত্তিক),পবা উপজেলা: ৬৪.৯ মেট্রিক টন, বাঘা উপজেলা: ৫৮.৩ মেট্রিক টন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন: ৪২.৬ মেট্রিক টন,বাগমারা উপজেলা: ২০ মেট্রিক টন, পুঠিয়া উপজেলা: ১৩.৫ মেট্রিক টন, দুর্গাপুর উপজেলা: ১৩ মেট্রিক টন, চারঘাট ও গোদাগাড়ী উপজেলা: ৯ মেট্রিক টন করে, তানোর উপজেলা: ৬ মেট্রিক টন।
এই বরাদ্দের আওতায় প্রায় ১৩৫টি মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং এসেছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মির্জা ইমাম উদ্দিন জানান, “উপজেলাভিত্তিক তালিকা অনুযায়ী নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে লবণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) তদারকি করছেন এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পর্যবেক্ষণে আছেন।”
গোদাগাড়ী উপজেলার ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ১৫টি প্রতিষ্ঠানে লবণ বিতরণ সম্পন্ন করেছি এবং চামড়া সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করছি, এবার ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।”
রাজশাহীর স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানগুলো এই উদ্যোগকে সরকারের সময়োপযোগী ও কার্যকর সিদ্ধান্ত হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, এ ধরনের উদ্যোগ একদিকে যেমন দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেবে, তেমনি চামড়া শিল্পেও নতুন প্রাণ ফিরিয়ে আনবে।