ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) ডায়রিয়া মহামারী রূপ ধারণ করেছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১৬০ জন শ্রমিক। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরও ৯৫ জন আর ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে ৬৫ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। রবিবার (১ জুন) এই তথ্য পাওয়া গেছে।
ইপিজেডের সাপ্লাই পানি পান করে ভয়াবহ এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি শ্রমিকদের।
আক্রান্তরা প্রাথমিকভাবে স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে বাড়িতেই চিকিৎসা গ্রহণ করছিল। অবস্থার অবনতি ঘটলে তারা হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়। এদিকে ইপিজেডের বিপুলসংখ্যক রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় ঈশ্বরদীতে স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে কোনও কোনও ফার্মেসি বেশি দামে স্যালাইন ও প্যামপাস বিক্রি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ইপিজেডে খাবারের যে সাপ্লাই পানি রয়েছে সেখান থেকে পয়জনিং হয়েছে বলে ধারণা করছেন ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার আলী এহসান। তিনি জানান, আজ ইপিজেডে বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করে পানির সোর্স ও ট্যাংকগুলো পরীক্ষা করছি। এগুলো মোটামোটি ঠিক আছে। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালে আইভি স্যালাইনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ইপিজেডে যে স্যালাইন রয়েছে, তা খাবার স্যালাইন। বিপুলসংখ্যক রোগী সামাল দিতে ডাক্তার ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
হাসপাতালের রেকর্ড থেকে জানা যায়, গত ২৯ মে থেকে পহেলা জুন পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ইপিজেডের ২৪৩ জন কর্মী হাসপাতালে ভর্তি হয়। এছাড়াও গুরুতর ১০ জন রোগীকে রাজশাহী ও পাবনা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮২ জন।
রবিবার (১ জুন) দুপুরে সরেজমিনে ঈশ্বরদী হাসপাতালে দেখা যায়, ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে বেড সংকট থাকায় স্যালাইন লাগিয়ে রোগীরা বারান্দা, করিডোরে ও সিঁড়িতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এবিএম শহীদুল ইসলাম বলেন, আজকের অবস্থা একটু ভালো। এখানকার মেডিকেল সেন্টারে আজ ৬৫ জন চিকিৎসা গ্রহণ করেছে। আমাদের মেডিকেল সেন্টারে এবং বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিপুল খাবার স্যালাইন মজুদ আছে। যাদের প্রয়োজন তারা এখান থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। পানি পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, ইপিজেডে ঈশ্বরদী ওয়াটার সাপ্লাই লি. পানি ট্রিটমেন্ট করে সরবরাহের দায়িত্ব পালন করছে। তারা পদ্মা নদী এবং ডিপ-টিউবওয়েলের পানি সংগ্রহ করে ট্রিটমেন্ট করে ইপিজেড এলাকায় সাপ্লাই দেয়। এই কারখানার বর্জ্য ট্রিটমেন্টের পর আবার পদ্মা নদীতেই ফেলে দেয় বলে কোম্পানির নামে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ইপিজেডের পানি পান করে রেনেসাঁ, নাকানো, এ্যাবা ও রহিম আফরোজ, আইএসএ, স্টিল হেয়ার, অস্কার বাংলাসহ কয়েকটি কোম্পানির প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক অসুস্থতার শিকার হয়েছেন। অসুস্থ শ্রমিকরা ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টার ও ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন। গুরুতর কয়েকজনকে রাজশাহী ও পাবনাতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কম গুরুতর অনেকেই বেসরকারি চিকিৎসকের নিকট হতে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।