অনলাইন ডেস্ক : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, মুজিববাদী সন্ত্রাসীরা, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাসীরা আমাদের গোপালগঞ্জের কর্মসূচিতে হামলা করেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে জঙ্গি কায়দায় তারা হামলা করেছে।
বুধবার (১৬ জুলাই) রাত পৌনে ১০টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, গোপালগঞ্জের কর্মসূচি শেষ করে মাদারীপুরে যাওয়ার সময় গোপালগঞ্জের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা, মুজিববাদী সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়, গুলিবর্ষণ করে, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের গাড়ি বহরে হামলা করে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সেনাবাহিনী ছিল, তাদের ওপরও হামলা চালায়। তাদের সহায়তায় আমরা খুলনা চলে আছি।
তিনি আরও বলেন, গোপালগঞ্জের আজকের ঘটনায় আওয়ামী লীগের আসল রূপ দেশবাসী এবং বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট হয়েছে। মুজিববাদী সন্ত্রাসী, ফ্যাসিস্ট এবং একটি জঙ্গি বাহিনীতে তারা রূপান্তরিত হয়েছে। তারা একটি গণতান্ত্রিক বা রাজনৈতিক দলের মধ্যে পড়ে না।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা ৫ আগস্টের পর থেকে শুনেছি গোপালগঞ্জের ভেতরে এই ফ্যাসিস্টদের আশ্রয়কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সারাদেশে যাদের নামে মামলা হয়েছে, ফেরারি আসামি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতারা রয়েছেন। তারা সকলে গোপালগঞ্জে ছিল এবং তারা আসলে পরিকল্পিতভাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং গণঅভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দকে হত্যার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, বাংলাদেশে যে মিথ তৈরি করে রাখা হয়েছিল গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ প্রোগ্রাম করতে পারবে না, এই মিথ আজ জাতীয় নাগরিক পার্টি ভেঙে দিয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি যেহেতু চ্যালেঞ্জ নিয়েছে ৩০ দিয়ে তারা ৬৪ জেলায় যাবে, জাতীয় নাগরিক পার্টি সেই চ্যালেঞ্জ অবশ্যই পূরণ করবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, হামলার ঘটনায় তিনজন গুরুতর আহত হয়েছে। এছাড়া ৬টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা শুনেছি ঘটনাস্থলে মারা গিয়েছে, আমরা সেই বিষয়েও তদন্ত চাচ্ছি। যাতে ঘটনা সুস্ঠু তদন্ত হয়।
প্রশাসনের বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রশাসন ঘটনার পরে যে তৎপরতা দেখাচ্ছে, এটা আগে থেকে শুরু করা যেত। যেহেতু গোপালগঞ্জে এই ধরনের একটা আশঙ্কা ছিল। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিকভাবে সভা-সমাবেশ করার অধিকার সব জায়গাতে আছে, শান্তিপূর্ণভাবে। আমরা সেই জায়গা থেকে গিয়েছিলাম। গোপালগঞ্জ তো বাংলাদেশের বাইরে না, কেন গোপালগঞ্জে প্রোগ্রাম করা যাবে না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল প্রশাসন ও সরকারের। সরকার বা প্রশাসনের ভিতর থেকে কোনো ধরনের এস্টাবলাইজড হয়েছে কিনা তদন্ত করে দেখতে হবে। তাদের তৎপরতা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। সারাদেশেই তো আমরা পদযাত্রা বা মার্চ করছি।
তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে ১৬ তারিখের প্রোগ্রাম ১৫-২০ দিন আগে ঠিক করা। সেই ধারাবাহিকতাই প্রোগ্রামটি ছিল। আওয়ামী লীগ অনেকদিন ধরে পরিকল্পনা করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। সরকার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থার তৎপর হওয়া উচিত ছিল। রাজনৈতিক দল এবং তাদের প্রধান নেতৃত্ব একটি জায়গায় যাচ্ছে সেই নিরাপত্তা দেওয়া, সকল ধরনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী সুবিধাজনক সময়ে এই দুই জেলায় কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে বৃহস্পতিবার পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ফরিদপুরের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।