নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা বৃহস্পতিবার। বিকাল ৪:৫৫। ৭ আগস্ট, ২০২৫।

কাশ্মির নিয়ে লেখা ২৫ বই নিষিদ্ধ করল ভারত, বাদ গেল না অরুন্ধতী রায়ের বইও

আগস্ট ৭, ২০২৫ ২:২৫
Link Copied!

অনলাইন ডেস্ক : কাশ্মির ইস্যুতে লেখালেখির ওপর আরও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত সরকার। কাশ্মির নিয়ে লেখা ২৫টি বই নিষিদ্ধ করেছে নয়াদিল্লি। নিষিদ্ধঘোষিত বইগুলোর মধ্যে বুকার পুরস্কারজয়ী ভারতীয় লেখক অরুন্ধতী রায়ের বইও রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বুধবার জম্মু ও কাশ্মিরের দিল্লি-শাসিত স্বরাষ্ট্র দপ্তর ২৫টি বই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এসব বইকে ‘সন্ত্রাসবাদকে গৌরবান্বিত’ ও ‘ভারতের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদে উসকানিমূলক’ বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। এসব বইয়ের লেখকরা ভারতের, কাশ্মিরের ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব।

নিষিদ্ধ বইগুলোর তালিকায় রয়েছে— অরুন্ধতী রায়ের ‘আজাদি’, এজি নূরানির ‘দ্য কাশ্মির ডিসপিউট ১৯৪৭-২০১২’, ভিক্টোরিয়া স্কোফিল্ডের ‘কাশ্মির ইন কনফ্লিক্ট’ এবং ক্রিস্টোফার স্নেডেনের ‘ইন্ডিপেডেন্ট কাশ্মির’।

এছাড়া সুমন্ত্র বোস, হাফসা কানজোয়াল, অনুরাধা ভাসিন, রাধিকা গুপ্তা, এসার বতুল, আথার জিয়া, পঙ্কজ মিশ্র, হ্যালি ডুশিনস্কি, মোনা ভান, পিয়ত্র বালসেরোভিচ এবং আগনিস্জকা কুশেভস্কার বইও নিষিদ্ধের আওতায় পড়েছে।

আরও পড়ুনঃ  ‘হয় পুরো গাজা দখল করুন, নয়তো ইস্তফা দিন’-নেতানিয়াহু

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বইগুলো ‘অভিযোগ, ভুক্তভোগী ব্যক্তির সংস্কৃতি এবং সন্ত্রাসবাদীদের বীর বানানোর ধারা’ তৈরি করে, যা ইতিহাসকে বিকৃত করে এবং সেনাবাহিনীকে অপমান করে উগ্রপন্থা বাড়ায়। এসব বইকে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার জন্য হুমকি বলেও উল্লেখ করা হয়।

২০২৩ সালের ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা আইনের ৯৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী এই বইগুলো বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে হাফসা কানজোয়াল বলেন, “কাশ্মির নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন, তাদের কাছে এটা অবাক হওয়ার কিছু নয়”। তিনি বলেন, ভারতের দীর্ঘ দখলদারি শুরু থেকেই তথ্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে আসছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং কাশ্মিরবাসী— দু’পক্ষের কাছেই। তার নিজের বই ‘কলোনাইজিং কাশ্মির: স্টেট-বিল্ডিং আন্ডার ইন্ডিয়ান অকুপেশন’-ও নিষিদ্ধ হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন প্রধান উপদেষ্টা

‘দ্য আনটোল্ড স্টোরি অব কাশ্মির আফটার আর্টিকেল ৩৭০’ বইয়ের লেখক অনুরাধা ভাসিনও সরকারের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “সব বই-ই গবেষণালব্ধ। একটিও সন্ত্রাসবাদকে গৌরবান্বিত করে না। সরকারের মিথ্যা আখ্যানকে চ্যালেঞ্জ করলেই যদি ভয় হয়, তাহলে সেই ভয়ই অনেক কিছু বলে দেয়।”

গত কয়েক মাস ধরেই জম্মু ও কাশ্মিরে বইয়ের দোকানে হানা, বই বাজেয়াপ্ত করার মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীনগরের দোকানগুলো থেকে অন্তত ৬৬৮টি বই জব্দ করা হয়, যার বেশিরভাগই ছিল আবুল আ’লা মওদুদীর লেখা বই।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ কাশ্মিরের বিতর্কিত ইতিহাস ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিকল্প বয়ানগুলো দমন করারই অংশ।

উল্লেখ্য, কাশ্মির নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কয়েক দশকের বিরোধ চলছে। দুই পক্ষই পুরো কাশ্মির নিজেদের দাবি করলেও আলাদা অংশ নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। ১৯৮৯ সাল থেকে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে শুরু হয় সশস্ত্র প্রতিরোধ, যেখানে অনেক মুসলিম স্বাধীনতা কিংবা পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে। ভারত পাকিস্তানের ওপর এই বিদ্রোহে মদদের অভিযোগ করলেও ইসলামাবাদ বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। অন্যদিকে কাশ্মিরিরা এই আন্দোলনকে বৈধ স্বাধীনতা আন্দোলন হিসেবেই দেখে।

আরও পড়ুনঃ  ভোলাহাটে যুবক-যুবতীদের মাঝে ফলজ ও বনজ গাছের চারা বিতরণ

এই দীর্ঘ সংঘাতে এখন পর্যন্ত লাখো মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেসামরিক, যোদ্ধা ও সেনাসদস্যও রয়েছেন। জাতিসংঘ একাধিকবার এই অঞ্চলে গণভোটের আহ্বান জানালেও তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।