মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি: ব্যস্ততম চাঁচড়া চেকপোস্টের চারপাশে তখন গাড়ির শব্দ, মানুষের আনাগোনা অন্ধকার নেমে আসছিল যশোর শহরে। হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে এক নারীর চলাফেরায় সন্দেহ জাগে পুলিশের। কাঁধে ছোট্ট ভ্যানিটি ব্যাগ—বাহ্যত সাধারণ, অথচ ভেতরে লুকানো ছিল ভয়ঙ্কর এক আস্তানা। ব্যাগ খুলতেই বেরিয়ে আসে আসক্তির মৃত্যুদূত, ৮০০ পিস ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট।
শনিবার সন্ধ্যায় এই নাটকীয় দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান এএসআই আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম। স্থানীয়রা তখনও বুঝতে পারেননি, চোখের সামনে কী এক অজানা খেলা মঞ্চস্থ হচ্ছে।
আটক হওয়া নারী মাসুরা বেগম—ঝিকরগাছার গদখালী সদিরালী গ্রামের মৃত আরশাদ আলীর মেয়ে। প্রথমে নির্দোষ দাবি করলেও পুলিশের জেরায় ভেঙে পড়েন তিনি। স্বীকার করেন, ব্যাগেই রয়েছে শত শত ট্যাবলেট। পরে তাকে আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
নারী ও শিশু—সিন্ডিকেটের নতুন অস্ত্র
পুলিশের একটি গোপন প্রতিবেদন বলছে, গত দুই বছর ধরে যশোরসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় সক্রিয় মাদক সিন্ডিকেট নারী ও শিশুদের ব্যবহার করছে বহনকারী হিসেবে। অনলাইনে বা মোবাইল অ্যাপে অর্ডার হয় মাদক, আর নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেয় নারীরা কিংবা অল্পবয়সী শিশুরা। সামাজিক আড়াল আর সহানুভূতির সুযোগ নিয়েই এই সিন্ডিকেট নিরাপদে কাজ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ।
শহরজুড়ে অন্ধকারের বাজার
এই একটি ঘটনার আড়ালে লুকিয়ে আছে যশোর শহরের ভয়ঙ্কর বাস্তবতা। অলিগলি থেকে শুরু করে ব্যস্ত সড়ক—যেখানেই হাত বাড়ানো যায়, মেলে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা কিংবা ট্যাপেন্টাডল। যেন পুরো শহরজুড়ে অদৃশ্য অন্ধকার বাজার বিস্তার লাভ করেছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অনেক সময় অভিযান চালালেও সেভাবে বড় সিন্ডিকেটকে ধরতে পারছে না। এ কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। কেউ কেউ আবার ইঙ্গিত দিচ্ছেন, এই কারবারের আড়ালে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও অনৈতিক সুবিধাভোগীর যোগসূত্র থাকতে পারে।
আতঙ্ক ও শঙ্কা
মাসুরা বেগমের মতো সাধারণ নারীর হাতে যখন শত শত ট্যাবলেট ধরা পড়ে, তখন প্রশ্ন জাগে—এ কি শুধুই বাহক, নাকি এর পেছনে রয়েছে বড় কোনো চক্র? চাঁচড়া চেকপোস্টের এই ঘটনা সেই প্রশ্নকে আরও উসকে দিয়েছে।
পুলিশ বলছে, “মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।” কিন্তু নগরবাসীর উদ্বেগ—“প্রতিদিন যদি ভ্যানিটি ব্যাগ বা স্কুলব্যাগে করে শহরে ঢোকে মাদকের পাহাড়, তাহলে আমাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?”