অনলাইন ডেস্ক : চাঁদে সফলভাবে অবতরণের আগ মুহূর্তে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছে জাপানের প্রথম বেসরকারি উদ্যোগের মহাকাশযান ‘রেজিলিয়েন্স’। ফলে শুক্রবার মিশনটি বাতিল ঘোষণা করেছে টোকিও ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘আইস্পেস’।
টোকিও থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
প্রতিষ্ঠানটি আশা করেছিল, তারা হবে বিশ্বের তৃতীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে প্রথম, যারা নিজেদের রোবটিক ল্যান্ডার নিয়ন্ত্রণ করে চাঁদের মাটিতে সফলভাবে নামাতে পারবে।
আইস্পেসের প্রধান নির্বাহী তাকেশি হাকামাদা সাংবাদিকদের জানান, ল্যান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা কম থাকায় মিশন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, অবতরণের সময় রেজিলিয়েন্স দ্রুত নিচে নামতে শুরু করলে মিশন কন্ট্রোল ইঞ্জিন চালু করে গতি কমানোর চেষ্টা করে।
তিনি আরো জানান, আমরা দেখতে পেয়েছি মহাকাশযানটির অবস্থান প্রায় সরাসরি নিচের দিকে চলে গেছে, তবে নির্ধারিত অবতরণ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তার অবতরণ নিশ্চিত করার মতো কোনো তথ্য মেলেনি।
২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির আগের মিশনও ব্যর্থ হয়েছিল।
শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে মহাকাশযানটির অবতরণের সময় নির্ধারিত ছিল। লক্ষ্য ছিল চাঁদের উত্তর গোলার্ধের ‘মারে ফ্রিগোরিস’ অঞ্চল।
তবে সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও সংকেত না পাওয়ায় মিশন কন্ট্রোলে নেমে আসে হতাশা। প্রায় ১৫ মিনিট পর সরাসরি সম্প্রচারে জানানো হয়, ল্যান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ ফেরানোর চেষ্টা চলতে থাকবে। শেষে লেখা হয় ‘চাঁদ জয়ের চেষ্টা কখনো থামবে না।’
মহাকাশযানটিতে যা ছিল
ল্যান্ডারে ছিল বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি। এর মধ্যে ছিল লুক্সেমবার্গে তৈরি ক্ষুদ্র রোভার ‘টেনাসিয়াস’, পানি থেকে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন আলাদা করার একটি ইলেকট্রোলাইজার, খাদ্য উৎপাদনের পরীক্ষামূলক সরঞ্জাম এবং গভীর মহাকাশের তেজস্ক্রিয়তা মাপার একটি ডিভাইস।
রোভারটির সঙ্গে আরো ছিল ‘মুনহাউস’ নামের একটি মডেল ঘর, যা তৈরি করেছেন সুইডিশ শিল্পী মিকায়েল জেনবার্গ।
মিশনের আরেকটি লক্ষ্য ছিল চাঁদের মাটি থেকে দ’ুটি নমুনা সংগ্রহ করে তা প্রতীকীভাবে নাসার কাছে ৫ হাজার ডলারে বিক্রি করা। যদিও সেই নমুনা চাঁদেই থেকে যেত, তবে উদ্দেশ্য ছিল চাঁদে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানোর পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে জোরালো করা।
কে কে সফল?
চাঁদে সফট ল্যান্ডিংয়ে এখন পর্যন্ত সফল হয়েছে পাঁচটি দেশ রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও জাপান। তবে এসব ছিল রাষ্ট্রীয় প্রকল্প।
এখন বেসরকারি কোম্পানিরাও মহাকাশ দৌড়ে অংশ নিচ্ছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, মহাকাশে যাতায়াত হবে সস্তা এবং ঘনঘন।
গত বছর, হিউস্টনে অবস্থিত ইন্টুইটিভ মেশিনস প্রথম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চাঁদে পৌঁছায়। যদিও তাদের ল্যান্ডারটি অবতরণ করেছিল ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায়, তবুও তারা পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করতে পেরেছে এবং ছবি পাঠিয়েছে।
চলতি বছরের মার্চে স্পেসএক্স রকেটে চড়ে ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেস প্রতিষ্ঠানের ‘ব্লু ঘোস্ট’ মিশনও সফল হয়। এই একই রকেটে চাঁদের পথে পাড়ি দেয় আইস্পেসের ‘রেজিলিয়েন্স’।
তবে রকেট শেয়ার করলেও, ‘রেজিলিয়েন্স’ চাঁদে পৌঁছাতে ‘ব্লু ঘোস্টের’ চেয়ে বেশি সময় নিয়েছিল। আইস্পেস তাদের প্রথম মিশনের ব্যর্থতার পর এবার নিজেদের সফলতার মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিল। ২০২৩ সালে তাদের প্রথম মিশন ঝুঁকিপূর্ণ অবতরণের কারণে ব্যর্থ হয়েছিল।
চাঁদে অবতরণ করা খুব কঠিন কাজ। মহাকাশযান গুলোকে থ্রাস্টার কন্ট্রোল নামক বিশেষ এক ইঞ্জিন দিয়ে ধীরে ধীরে নিচে নামতে হয়। কারণ চাঁদের ভূপৃষ্ঠ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
চলতি বছরের মার্চের শেষদিকে ইনটুইটিভ মেশিনস-এর দ্বিতীয় মিশনে পাঠানো ‘অ্যাথেনা’, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে মন্স মউটন প্ল্যাটো নামক স্থানে নামার জন্য তৈরি হয়েছিল, সেখানে অবতরণ করার সময় যানটি কাত হয়ে পড়ে যায়। ফলে সৌরশক্তি না পেয়ে তা অচল হয়ে পড়ে।