স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জে : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে রাতের অন্ধকারে মোস্তফা কামাল নামে একজন সমাজসেবকের রাস্তার পাশে লাগানো গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।
বুধবার (৯ জুলাই) দিবাগত গভীর রাতে উপজেলার দাইপুকুরিয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের চাকলা- দীঘলি বিলের রাস্তার দুই পাশে লাগানো কৃষ্ণচূড়া, জারুল, জাম গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সকালে রাস্তায় গিয়ে গাছের মালিক মোস্তফা কামাল কাটা গাছগুলো দেখে ভেঙ্গে পড়েন। এলাকার মানুষও এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন।
স্থানীয়রা জানায়, সমাজসেবক গোলাম মোস্তফা সরকারি রাস্তার দুই পাশে উন্নত জাতের ফুল ও ফলের গাছ লাগিয়ে পরিচর্যা করে আসছিলো। বুধবার রাতে দূবৃর্ত্তরা তাঁর লাগানো ২০টি কৃষ্ণচূড়া, জারুল, জাম গাছগুলো কেটে ফেলেছে। স্থানীয়রা আরও জানান, এ গাছগুলো বড় হলে রাস্তার পাশের শোভাবর্ধন হতো। মাঠে কাজ করে এসে চাষি ও পথচারী গাছের ছায়ায় বসে আরাম করতো। গাছ গুলো কোনোটার মাথা আবার কোনোটা সম্পূর্ন নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। যা থেকে আর গাছ পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। এটা চরম অন্যায় করেছে, আমরা কঠোর শাস্তি দাবী করছি।
দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম বাদশা বলেন, বিশিষ্ট সমাজসেবক মোস্তফার সাথে আমার জানামতে কারো কোন শত্রুতা বা পারিবারিক কোন দ্বন্দ্ব নাই। সকালে জানার পর রাস্তায় এসে দেখলাম গাছগুলো কেটে ফেলেছে, যা দেখেই কান্না চলে আসছে। এ ঘটনায় আশপাশের উপস্থিত সবাই খুব কষ্ট পেয়েছে। আমরা চাই যারা গাছ কাটার মতো এই জঘন্য কাজটি করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
চাকলা-মিয়াপাড়া জামে মসজিদের ইমাম আলহাজ্ব সাইদুর রহমান বলেন, এভাবে গাছ কেটে ফেলে কঠিন অপরাধ করেছে। আমরা এলাকাবাসী কঠিন গরমের সময় ক্লান্ত কৃষকের একটু বিশ্রাম এবং সৌন্দর্যের জন্য মানুষ ও পশু পাখির চরম উপকারে আসতো এসব গাছ। তাই সবাই সহযোগিতা করে গাছগুলো রক্ষা করার চেষ্টা করছি। তারপরও দুর্বৃত্তরা রাতের আধারে গাছগুলো কেটে পরিবেশ ধ্বংস করেছে। আমরা এলাকাবাসী তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি করছি। এই ধরনের গাছ যেন আর কেউ না কাটতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য, আপনাদের মাধ্যমে বিষয় অবগত করছি। এবং রাস্তার দুইপাশের জায়গা মাফ জরিপ করে সীমানা নির্ধারণের জোর দাবি চাকলা গ্রামবাসীর।
সমাজসেবক মোস্তফা কামাল জানান, কয়েক বছর আগেও এভাবে রাস্তার পাশে গাছ লাগিয়েছিলাম কিন্তু একইভাবে দূর্বৃত্তরা কেটে ফেলেছিলো।
তিনি আরও বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে গাছগুলো অনেক সুন্দর হয়ে উঠেছিলো। কিন্তু বুধবার (৯ জুলাই) দিবাগত গভীর রাতে দূবৃর্ত্তরা জামসহ তাঁর ২০টি গাছ কেটে ফেলেছে। এতে তার স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে।
এই ধরনের গাছ যেন আর কেউ কাটতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনারা সাংবাদিকদের মাধ্যমে এবিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করছি, আর যেনো গাছ কেটে ফেলতে না পারে। তিনি আরও বলেন, পুনরাবৃত্তি হলে লিখিত অভিযোগ করবো। তদন্ত সাপেক্ষে আমরা সচেতন এলাকাবাসী চাই যে রাস্তার দুইপাশের জায়গা মাফ জরিপ করে সীমানা নির্ধারণের। তিনি আরও বলেন আমি চাকলা দাখিল মাদ্রাসা ও গোমস্তাপুর উপজেলার রামদাস বিল সহ কয়েকটি এলাকায় বৃক্ষরোপন করেছি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য জেলার বিভিন্ন এলাকায় বৃক্ষরোপন অব্যহত রাখবো। প্রশাসন ও সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
এবিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ আজহার আলী মুঠোফোনে বলেন, বৃক্ষরোপন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। অথচ এভাবে একজন সমাজসেবকের লাগানো বৃক্ষ কেটে ফেলে চরম অন্যায় করেছে দুর্বৃত্তরা। এটি শাস্তিযোগ্যে অপরাধ, অভিযোগ পেলে শক্তভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরবর্তীতে যেনো আর কেউ বৃক্ষ কেটে ফেলার মতো অপরাধ করতে না পারে।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ গোলাম কিবরিয়া মুঠোফোনে জানান, এ ব্যাপারে থানায় কেউ অভিযোগ কিংবা সাধারণ ডায়েরি করেনি। করলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।