স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএডিসির এক ডিলারের ডিএপি সার পাচারের সময় স্থানীয় চাষীরা হাতেনাতে ধরেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে সারগুলো উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আবারও ডিলারের গুদামে পাঠানো হয়েছে। শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে জেলার সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের আমনুরা স্টেশন বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও চাষীরা জানান, সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে ১৫ বস্তা ডিএপি সার নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এ সময় কয়েকজন চাষী ওই ভ্যানের গতিরোধ করে সার ক্রয়ের মেমো দেখতে চান। কিন্তু ভ্যান চালক কোন মেমো দেখাতে পারেন নি। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে ভ্যানটি সেখানে আটকে রাখা হয়। পরে সেখানে উপস্থিত হন ওই সারের বিক্রেতা আমনুরায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএডিসি’র সার ডিলার মেসার্স একরামুল হক অ্যান্ড সন্সের সত্বাধিকারী একরামুল হক।
তিনিও মেমো ছাড়া সার বিক্রির কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি। বিষয়টি নিয়ে সেখানে ডিলারের লোকজন ও চাষীদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে উভয়ের মধ্যে হট্টগোলের পর সেখানে আসেন উপজেলা কৃষি অফিসের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আনিসুল হক মাহমুদ, এবং ঝিলিম ইউপি (আমনুরা) তদন্ত কেন্দ্রের আইসি মোস্তাফিজুর রহমান। তারা উভয়পক্ষকে শান্ত করে সারগুলো আবারও ডিলারের গুদামে নিয়ে যান।
জামতলা এলাকা কৃষি উদ্যোক্তা গোলাম মোস্তফা সুমন বলেন, আমরা ডিলারের কাছে গিয়ে সার চাইলে বলা হয় সার নাই। অথচ গোপনে তারা পাশের উপজেলায় সার পাচার করছে। আবার আমরা পাচারের উদ্দেশ্যে মেমো ছাড়া সার নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উল্টো আমাদের উপরই চড়াও হয় ডিলারের লোকজন। তিনি বলেন, এভাবেই ১০-১৫ বস্তা করে সার প্রতিনিয়ত পাচার হয়ে যাচ্ছে অন্য উপজেলা বা ইউনিয়নে। ডিলাররা নিজ ইউনিয়নের কৃষককে সার না দিয়ে অন্যত্র বিক্রি করছেন বেশি দামে।
আরেক কৃষি উদ্যোক্তা আসাদুল আল মাহমুদ বিপ্লব বলেন, সরকারের ভর্তুকির সার প্রকৃত কৃষকদের কাছে বিক্রি না করে অতিরিক্ত দামে বাইরে বিক্রি করছে ডিলাররা। আমরা এসব বিষয় নিয়ে কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছে যাবো। আমরা প্রকৃত কৃষকরা সার পাই না অথচ আমাদের ইউনিয়নের সার অন্য ইউনিয়নে এমনকি অন্য উপজেলাতে চলে যাচ্ছে। অবৈধ ভাবে ডিএপি সার পাশের উপজেলা তানোরে পাচারের সময় আটক করলে আমাদের উপর চড়াও হয় একরামুল হক সহ তার লোকজন।
বিএডিসি’র সার ডিলার মেসার্স একরামুল হক অ্যান্ড সন্সের সত্বাধিকারী একরামুল হক বলেন, একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে আমাদের ফাঁসানোর জন্য এসব করছে।
যে সারগুলো আটক করেছিলো সেগুলো সরকারি বরাদ্দের না! বাইরের ডিলার থেকে কিনেছি। যে কারণে সরকারি দামে এগুলো বিক্রি করা সম্ভব নয়। যারা আমার সার আটকে ছিল তারা সরকারি দামে সার কিনতে চেয়েছিল।
কৃষি অফিসার, পুলিশ ও স্থানীয়দের সামনেই সারগুলো আমার গোডাউনে রাখা হয়েছে।
কৃষক বিপলব সার পাচারে বাঁধা দিয়েছিলো সেকারনে আপনারা মারধর করলেন কেনো? এমন প্রশ্ন করলে অস্বীকার করে এড়িয়ে যান ডিলার একরামুল হক।
সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আনিসুল হক মাহমুদ বলেন, ডিলাররা কিছু সার অন্য উপজেলায় পাঠিয়ে দেয়, এ অভিযোগ সত্য। ঝিলিম ইউনিয়নের সার তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়।
আমাদের যারা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আছেন তারা তো আর সব সময় ডিলারের দোকান বা গুদামে বসে থাকতে পারেন না, তাদের অন্য কাজও তো থাকে। তিনি বলেন, আজকে চাষীরা যে সারগুলো আটকে রেখেছিল, সেগুলো ডিলারের গুদামে রাখা হয়েছে। আমরা ওই ডিলারের সার মজুদের পরিমাণও জেনে নিয়েছি। আজ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সারগুলো বিক্রি করা হবে।