অনলাইন ডেস্ক : ভারতের ওপর চাপ আরও বাড়তে পারে, কিন্তু আমরা তা সহ্য করে নেবো। এমন মন্তব্যই করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৫০ শতাংশ শুল্ক ভারতের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে এবং আর একদিনের মধ্যেই তা কার্যকর হতে চলেছে।
আর এমন সময়ে এসেই চাপ আরও বাড়তে পারে বলে মন্তব্য করলেন মোদি। সোমবার (২৫ আগস্ট) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মার্কিন শুল্কসীমার শেষ সময়সীমা ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোমবার স্পষ্ট জানিয়েছেন, তার সরকার কৃষক ও ক্ষুদ্র শিল্পের স্বার্থে কোনো ছাড় দেবে না। তিনি সতর্ক করে বলেন, “আমাদের ওপর চাপ বাড়তে পারে, কিন্তু আমরা তা সহ্য করে নেবো।”
মূলত একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বর্তমানে অচলাবস্থায় রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের পণ্যে দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছেন। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্কও রয়েছে, যা রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার শাস্তি হিসেবে ভারতের ওপর আরোপ করা হয়েছে।
এমন অবস্থায় বিশ্বের অন্যতম বড় তেল আমদানিকারক দেশ ভারতকে আগামী ২৭ আগস্টের মধ্যে বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজে বের করতে হবে। বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত তেলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া থেকে। সস্তায় রাশিয়ান তেল কিনে ভারত কয়েক বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করেছে, যা অভ্যন্তরীণ জ্বালানি মূল্যও স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে বলে দাবি করেছে দেশটি।
এখন সরবরাহকারী বদলাতে হলে দামের ঊর্ধ্বগতি দেখা দিতে পারে, আবার তা না করলে ভারতের রপ্তানি খাত বিপাকে পড়বে। নয়াদিল্লি ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপকে “অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য” বলে আখ্যা দিয়েছে।
গুজরাটের আহমেদাবাদে এক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধনের পর দেওয়া বক্তব্যে মোদি বলেন, “আজকের বিশ্বে সবাই অর্থনৈতিক স্বার্থকে কেন্দ্র করে রাজনীতি করছে। আমি এখানে আহমেদাবাদের মাটিতে দাঁড়িয়ে আমার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, দোকানদার ভাই-বোনদের, কৃষক ভাইদের, পশুপালনকারী ভাইদের বলছি। গান্ধীর এই ভূমি থেকে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি— ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হোক, কৃষক হোক কিংবা পশুপালক, আপনাদের স্বার্থই মোদির কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, “আমার সরকার কোনোদিন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কৃষক বা পশুপালকদের ক্ষতি হতে দেবে না। যত চাপই আসুক, তা মোকাবিলার শক্তি আমরা বাড়াতে থাকব।”
মোদি দেশীয় পণ্যের ব্যবহারের ওপরও জোর দেন। তিনি বলেন, “আমাদের সবার উচিত ‘শুধু ভারতীয় পণ্য কিনব’ এই মন্ত্র অনুসরণ করা। ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানের সামনে বড় বোর্ডে লিখে রাখুন— এখানে কেবল স্বদেশি পণ্য বিক্রি হয়।”
এনডিটিভি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা এই ৫০ শতাংশ শুল্ক ভারতের কম মুনাফার শ্রমনির্ভর শিল্পগুলো— যেমন রত্ন ও অলঙ্কার, বস্ত্রশিল্প এবং সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানিকে বড় ধরনের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। কৃষিখাতও ভারতের বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের উৎস এবং এটিও দীর্ঘদিন ধরেই বাণিজ্য আলোচনার মূল জটিলতা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর উর্জিত প্যাটেল বলেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক হুমকি ভারতের “সবচেয়ে বড় আশঙ্কাকে বাস্তব করেছে”। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, চুক্তি না হলে “অপ্রয়োজনীয় বাণিজ্যযুদ্ধ” শুরু হবে এবং এতে “ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী”।