নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা রবিবার। রাত ৩:১১। ২৯ জুন, ২০২৫।

চিকিৎসায় এআইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজশাহীতে ‘সামার সামিট’

জুন ২৮, ২০২৫ ১০:৩৫
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার : চিকিৎসায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ভবিষ্যৎ নিয়ে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের ‘রেজিওনাল সামার সামিট’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৮ জুন) সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার কাইছার রহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে উঠে আসে আগামীতে চিকিৎসকদের জন্য এআই একটা পরিপূরক ব্যবস্থা হবে। এআই এবং মানুষ একসঙ্গে কাজ করলে ভবিষ্যতে সুপার হিউম্যান বা সুপার ফিজিসিয়ান গড়ে উঠতে পারে। তবে যন্ত্রের পাশে মানুষের পর্যবেক্ষণ থাকতেই হবে।

এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ জাওয়াদুল হক। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল হকের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ফারুক আহম্মেদ।

সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের রাজশাহীর সদস্য সচিব মোহাম্মদ আখতারুল ইসলাম। রোগ নির্ণয়ে আর্টফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্সের ব্যবহার নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেইজড মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক সাইয়েদুর রহমান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আজিজুল হক আজাদ ও ঢাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাক্তার আরিফুল বাশার।

সম্মেলনে প্রবন্ধ এবং অন্যান্য বক্তাদের কথায় উঠে আসে, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিকিৎসকদের জন্য একটা পরিপূরক ব্যবস্থা হবে। যন্ত্রকে যদি আগে থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, অসংখ্য বইপত্র, মেডিকের জার্নাল এসব ইনটপুট দেওয়া যায়, তাহলে সে সব পড়ে ফেলে সেখান থেকে একটা উত্তর দিতে পারবে। একটা জটিল রোগীর কেস হিস্ট্রি দিলে সে তা বিশ্লেষণ করে রোগ নির্ণয় করে দিতে পারবে। এর পরবর্তী ব্যবস্থাপত্র কী হতে পারে সে ব্যাপারে সে পরামর্শ দিতে পারে। এই ক্ষমতা এআই এর ইতিমধ্যে হয়েছে। তাকে যদি একটা ছবি, একটা এক্সরে ফিল্ম, এমআর আই বা সিটি স্ক্যান ফিল্ম দেওয়া যায়, সে রোগ নির্ণয় করে দিতে পারবে। ভবিষ্যতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে এআইয়ের একটা বিরাট ভূমিকা থাকবে। সে চিকিৎসকদের পরিপুরক হিসেবে সাহায্য করতে পারবে। যেমন ধরা যাক,একজন কনিষ্ঠ চিকিৎসক ওয়ার্ডের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি এমন একটা এক্সরে দেখলেন যেরকম আগে দেখেন নাই। তিনি ছবি তুলে এআইতে আপলোড করলেন এআই তাকে পরামর্শ দিল। এটা চিকিৎসকদের জন্য বিশাল ‘ট্রান্সফরমেন্ট’ হবে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ (এসডিজি)তে বলা আছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে সকল মানুষের কাছে আমাদের স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ১১ মিলিয়ন চিকিৎসকের ঘাটতি আছে। সারা দুনিয়ায় যত মানুষ আছে তাদের অর্ধেকের বেশি মানুষের সুষ্ঠু চিকিৎসা পাওয়ার ব্যবস্থা এখন নাই। আমরা যদি ভালো একটা এআই সেটআপ তৈরি করে ফেলতে পারি, তাহলে এই মানুষগুলো স্বাস্ব্যসেবা পাবে। দূর থেকেও এআইয়ের সাহায্যে মানুষ আমরা চিকিৎসা দেওয়া যাবে।

আরও পড়ুনঃ  জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের বর্ণাঢ্য কর্মসূচি

এআইয়ের ভুল করার আশঙ্কা নিয়ে বক্তারা বলেন, ‘আমাদের ট্রেনিংয়ের ওপরে নির্ভর করবে তার ভুল করার মাত্রা। আমরা এমন তথ্য এআইকে দিলাম, যে প্রশিক্ষক তথ্য দিচ্ছে তার হয়তো এটা পক্ষপাত রয়েছে। সে তার মতো করে তথ্য দিল। তাহলে এআই পক্ষপাতমূলক ভুল পরামর্শ দিবে। যেমন চাইনিজরা একটা এআই হাসপাতাল করেছে সেটার সফলতার হার হচ্ছে ৯৩ শতাংশ। তার মানে ৭ শতাংশ সে কিন্তু ভুল করছে। এই যে ভুলের পারসেন্টেজ-আস্তে আস্তে কিন্তু কমে আসবে। যত দিন যাবে তত বেশি তথ্য আমরা এআইকে দিতে পারব। ততবেশি সে হালনাগদ হবে। তবে তার পাশে মানুষকে সব সময় লাগবে। সে যাই বলুক মানুষকে তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তারপরে এটা সামনে নিয়ে যাব।

আরও পড়ুনঃ  রাজশাহীতে বিশেষ অভিযানে ১ জনসহ মোট গ্রেপ্তার ৪

এরকম কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বক্তারা বলেন, ‘এর মধ্যে আমরা অনেক কয়টি উদাহরণ পেয়েছি। যেমন একটা এআই আছে, যার কাজ হচ্ছে মানুষের শরীরের ইনফেকশন আছে কি না, সে সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া কিন্তু কয়েক জায়গায় সেই অকৃতকার্য হয়েছে। এই মুহূর্তে একটা অ্যাপ আছে যে ক্যান্সার রোগীদের ক্যামো থেরাপির ব্যাপারে পরামর্শ দেয়। কয়েকটি জায়গায় সে ভুল করেছে। যেহেতু দক্ষ মানুষ তাকে পর্যবেক্ষণ করছিল, তারা সেটা ধরে ফেলেছে। যত দিন যাবে এই ভুলের মাত্রা আস্তে আস্তে কমে আসবে।

আরও পড়ুনঃ  মাদক বিস্তারের প্রমাণ যেহেতু স্পষ্ট, এখন শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে-বিভাগীয় কমিশনার

যেমন এআই পরিচালিত হাসপাতালে ৭ শতাংশ ভুল করছে। পর্যবেক্ষক হিসেবে যে মানুষ দায়িত্বে রয়েছে সে তাকে সংশোধন করে দেবে। তাহলে দুইটা লাভ হবে ওই যে ৭ শতাংশ সে ভুল করেছে, সেই ভুলের মাত্রা আর থাকবে না। শতভাগ সঠিক কাজ হবে। অর্থাৎ হিউম্যান ইনপুট দেওয়ার পরে আগের বার সে যে ভুলটা করেছে, পরে আর করবে না। আমরা এআই এবং ইউম্যান মিলে একটা সুপার হিউম্যান এনটিটি তৈরি করব বা একটা সুপার ফিজিসিয়ান তৈরি করতে পারব। এখনো সারা পৃথিবীতে অনেক মনুষ্য ভুল হয়। যদি আমরা একসঙ্গে কাজ করি তাহলে এই মনুষ্য ভুলটাও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।