অনলাইন ডেস্ক : ২০০০ সালের আজকের দিনে (২৬ জুন) টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছিল বাংলাদেশ। সময়ের হিসেবে ২৫ বছরে পর্দাপণ করল বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের যাত্রা। একই বছরের ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে নিজেদের অভিষেক টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামে বাংলাদেশ। অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল এখন বোর্ড সভাপতি। টেস্ট মর্যাদাপ্রাপ্তির রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে নানা আয়োজন রেখেছে বিসিবি।
টেস্ট ক্রিকেটের মাহেন্দ্রক্ষণে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল আক্ষেপের সুরেই বললেন, ‘টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির ২৫ বছর হয়েছে। কিন্তু তার আগে ১৯৭৭ সালে আমরা যেদিন প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছি, ১৯৯৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছি, বাংলাদেশ প্রথম যেদিন টেস্ট জিতেছে সেটাও স্মরণীয় দিন। আমাদের এসব উদযাপন করা উচিত ছিল প্রতিবছরই।’
গেল ২৫ বছরে এমন অনুষ্ঠান এবারই প্রথম, ‘ক্যালেন্ডারে যেমন ঈদ থাকে পহেলা বৈশাখ থাকে এরকম দিন উদযাপন করা উচিত টেস্ট ক্রিকেটেও। এই ২৫ বছর অন্তত ২৫টা প্রোগ্রাম হওয়া উচিত ছিল, ছোট আকারে হোক কিংবা বড় আকারে হোক। হলে কিন্তু টেস্ট স্ট্যাটাসের যে কালচার সেটা ঠিক থাকতো আরও উন্নতি হতো।’
ক্যালেন্ডারে যেমন ঈদ থাকে পহেলা বৈশাখ থাকে এরকম দিন উদযাপন করা উচিত টেস্ট ক্রিকেটেও। এই ২৫ বছর অন্তত ২৫টা প্রোগ্রাম হওয়া উচিত ছিল, ছোট আকারে হোক কিংবা বড় আকারে হোক। তাহলে কিন্তু টেস্ট স্ট্যাটাসের যে কালচার সেটা ঠিক থাকতো আরও উন্নতি হতো।
এমন অনুষ্ঠানে সাড়া দিয়েছে দেশের তরুণ ক্রিকেটাররাও। কয়েক বিভাগে গিয়েছেন বুলবুল নিজেও, ‘২৫ বছর সেটা সেই দিনই আছে, কিন্তু আমরা টেস্ট স্ট্যাটাসটা যেদিন পেয়েছিলাম সেদিনটা উদযাপন করছি। সেই সুযোগে ক্রিকেট আমরা বিভক্তিকরণ করছি এটা জানাচ্ছি। একটা শুরু হিসেবে বলছি, টেস্ট ক্রিকেটার উন্নয়নের কথাই বলছি সব জায়গায়।’
অভিষেক টেস্টের সদস্যরা সবসময়ের বন্ধু থাকবেন বলে মনে করেন বুলবুল, ‘অভিষেক টেস্টের ১১ জন কিন্তু আমাদের ইতিহাসের একটা অংশ। আমরা লাইফটাইম বন্ধু, অবশ্যই সেটা মনে থাকবে সারাজীবন।’ রজতজয়ন্তীতে মিলনমেলার আয়োজন করেছে বিসিবি। সব ক্রিকেটারের উপস্থিতি নিয়ে বুলবুল বলেন, ‘অনেকে দেশের বাইরে আছে কোচিং করাচ্ছে। রোকন বাইরে আছে, এ ছাড়া অনেকে দেশে নেই এখন। যারা আছে তারা উপস্থিত থাকবেন। খেলোয়াড়দের পাশপাশি সে সময়ের সবাই থাকবেন। টিম ম্যানেজার, ওই সময়ের কোচ তারাও উপস্থিত থাকবেন।’
বিশেষ এই ক্ষণে বুলবুল আলাদা করে স্মরণ করলেন ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে থাকা এডি বার্লোকে। অনেকের কাছে বার্লো নামটা অনেকটা অপরিচিত, থাকাটাও স্বাভাবিক। দেশের ক্রিকেটের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পেছনে তার অবদান অতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ৩ দিনের ম্যাচ কিংবা ৪ দিন বা ৫ দিনের ম্যাচ সবকিছুর পরিকল্পনা তার অধীনে করেছিল বাংলাদেশ দল।
দীর্ঘদিন অসুস্থতার কারণে ২০০৫ সালে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। তবে সেই বার্লোকে এখনো মনে রেখেছেন বুলবুল। তাইতো রজতজয়ন্তীর আগে বার্লোকে নিয়ে বুলবুল বলেন, ‘আমরা খুব মিস করবো আমাদের প্রয়াত কোচ তিনি আর পৃথিবীতে নাই। তার কথাও আমরা মনে করব।’
এডি বার্লোকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন অভিষেক টেস্টের দ্বাদশ খেলোয়াড় রাজিন সালেহ। ঢাকা পোস্টকে তিনি বার্লো সম্পর্কে জানালেন অজানা অধ্যায়। রাজিন সালেহ বলছিলেন, ‘বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে উঠে আসার পেছনে অনেক অবদান এডির। তার বানানো কাঠামোতেই এখনো ঘরোয়ার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে তিনি মন থেকে ভালোবাসতেন। অসুস্থ হওয়ার পরেও একবার বাংলাদেশে এসেছিলেন।’
এডির জীবনে সবচেয়ে বড় সাপোর্ট ছিলেন তার স্ত্রী কলি বার্লো। এমনকি তার ব্যক্তিগত অ্যানালিস্টও ছিলেন তিনি। সেই গল্প জানিয়ে রাজিন বলছিলেন, ‘এডি বার্লোর স্ত্রী ছিলেন তার কম্পিউটার অ্যানালিস্ট। মৃত্যুর আগ পর্যন্তই বাংলাদেশ ক্রিকেটের খোঁজখবর রেখেছেন তিনি। তার স্ত্রী জানিয়েছিলেন এগুলো, তিনিও খুব অমায়িক মানুষ ছিলেন। তার অবদান অস্বীকার করার মতো না বাংলাদেশ ক্রিকেটে। তাকে মিস করি, তার কথা মনে হলে মনটা এখনো ভার হয়ে আসে।’
একজন কোচের হয়তো জীবনে আর কিছু চাওয়া পাওয়ার থাকে না। মৃত্যর ২০ বছর পরেও শিষ্যরা তাকে মনে রেখেছেন, তার জন্য মন খারাপ করছেন। বেঁচে না থেকেও এডি বার্লো যেন থেকে গিয়েছেন ক্রিকেটারদের অন্তরে।