তানোর প্রতিনিধি : রাজশাহীর তানোর উপজেলার বেশীর ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নেই বিজ্ঞানাগার। যেখানে রয়েছে, সেগুলোতেও নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকের কক্ষের আলমারিতে কিছু যন্ত্রপাতি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী জানে না, তাদের প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানাগার আছে কি না। ফলে, ব্যবহারিক বিজ্ঞান শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বাড়ছে বিজ্ঞানের প্রতি ভীতি। দিন দিন কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। অথচ বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাসিক ফির সঙ্গে বিজ্ঞানাগার ফি নেওয়া হয়। কিন্তু বিজ্ঞান বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
তানোর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, তানোর উপজেলায় বে-সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে ৬০টি, সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ১টি এবং মাদ্রাসা রয়েছে ২২টি। এর মধ্যে ৩টি বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার। তবে, এর ব্যবহার নেই বল্লেই চলে। উপজেলার ১৭ টি কলেজেরও একই অবস্থা। তানোর উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ বিদ্যালয়ের অবস্থা জরাজীর্ণ। প্রধান শিক্ষকদের ভাঙাচোরা আলমারিতে ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য রাখা হয়েছে কয়েকটি যন্ত্রপাতি।
তানোর উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়য়ের প্রধান শিক্ষকরা বলছেন, বিজ্ঞানাগার না থাকাই বিজ্ঞান বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। বর্তমান কারীকুলামে বিজ্ঞান বিষয়ের ব্যবহারিক শিক্ষার গুরুত্ব নেই। উপজেলার সুকদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুকুমার চন্দ্র দাস বলেন, তাদের স্কুলে বিজ্ঞানাগার না থাকায় বিজ্ঞান শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তানোর উপজেলা প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই একই অবস্থা বলেও জানান তিনি।
কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রাব্বানী বলেন, তার স্কুলে বিজ্ঞানাগার রয়েছে। তিনি বলেন, নতুন কারীকুলামে বিজ্ঞান বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষায় গুরুত্ব নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থানে ৯০ দশকরের কারীকুলামে ফিরিয়ে নেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অভিভাবকরা বলছেন, বিজ্ঞান বিষয়ে পড়া লিখা করলেও ছেলে মেয়েরা ব্যবহারিক ক্লাস করতে না পারায় ব্যবহারিক শিক্ষা পাচ্ছে না। ফলে, বিজ্ঞান বিভাগের প্রতি একরকম ভীতি তৈরি হয়েছে। একারনেই অনেকেই আর বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে চাইছে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার একাধিক মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষকেরা বলেন, প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানাগারের জন্য আলাদা একটি ফান্ড আছে, যার নামমাত্র একটি অংশ বিজ্ঞানাগারের কাজে লাগানো হয়। বাকি অর্থ খরচ করা হয় অন্য খাতে, একারণে বিজ্ঞানাগার সমস্যার অবসান হচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষক বলেন, কক্ষ সংকটের কারণে বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রপাতি ও কেমিক্যাল আমার কক্ষের আলমারিতে রাখা হয়েছে। যখন ক্লাস হয়, তখন শিক্ষকেরা সেগুলো শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যান।
এবিষয়ে তানোর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিগত সরকারের আমলের নতুন কারিকুলামে বিজ্ঞান বিষয়ের ব্যবহারিকের বিজ্ঞানাগার তুলে দেয়ায় প্রতিষ্ঠান গুলোতে ব্যবহারিক শিক্ষা পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। একারেনই বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা বলেও জানান তিনি।