নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা শুক্রবার। সকাল ১০:১৭। ১৮ জুলাই, ২০২৫।

থমথমে গোপালগঞ্জ, বাড়ল কারফিউ

জুলাই ১৮, ২০২৫ ৫:৪৯
Link Copied!

অনলাইন ডেস্ক : এনসিপির পদযাত্রায় হামলার জেরে জারি করা কারফিউর সময় বাড়ানো হয়েছে। রাস্তাঘাটে কমেছে জনসমাগম। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বাড়ানো হয়েছে টহল। গতকাল গোপালগঞ্জ শহরে। ছবি: সরদার রনি

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রায় হামলা ও সংঘর্ষের পর সেখানে জারি করা কারফিউর সময় বাড়ানো হয়েছে। শুরু হয়েছে যৌথ বাহিনীর অভিযান। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চলমান অভিযানে আটক করা হয়েছে ২৫ জনকে। এদিকে কারফিউ ও বুধবারের সহিংসতার ঘটনার পর গোপালগঞ্জে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাস্তাঘাটে মানুষের আনাগোনা একেবারেই কম।

এক বছর আগে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া মানুষের কথা শুনতে ১ জুলাই থেকে সারা দেশে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার গোপালগঞ্জে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ ঘোষণা করেছিল এনসিপি। এই কর্মসূচি ঘিরে বুধবার সকাল ৯টার পর থেকে বিকেল পর্যন্ত চার দফায় হামলা চালান আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগসহ দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। হামলা হয় সদর উপজেলার কংশুরে পুলিশ সদস্য ও তাঁদের গাড়ি, সদর উপজেলার ইউএনও, শহরের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশস্থল, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, জেলা কারাগার চত্বরসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে। এ সময় বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুনঃ  হেরোইন পাচারের সময় রাজশাহীতে মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে বুধবার রাত ৮টা থেকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ দেওয়া হয় গোপালগঞ্জ জেলাজুড়ে। কারফিউ জারির আগে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় গোপালগঞ্জ শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন। এরপর গতকাল সেই কারফিউর মেয়াদ বাড়ানো হয়।

গতকাল ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ব্রিফিং করেন। সেখানে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে নতুন করে শুরু হওয়া কারফিউ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এর মাঝে আজ শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে কারফিউর বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

থমথমে পরিস্থিতি গোপালগঞ্জে

এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে বুধবার গোপালগঞ্জে দিনভর সহিংসতা ও রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে কারফিউর কারণে শহরের রাস্তাঘাট প্রায় জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে। গতকাল সকালে শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। রাস্তায় মানুষের চলাচলও ছিল কম।

গতকাল সকালে শহরের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে দেখা গেছে, হামলার অন্যতম স্থান শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় সড়কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ইট-পাটকেল, বাঁশসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধক সামগ্রী। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বাড়তি সদস্য মোতায়েন করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আরও পড়ুনঃ  ‘মব’ সাজাতে সোহাগের দেহ টেনে এনে উল্লাস করে খুনিরা

শহর ঘুরে দেখা যায়, গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের সামনে মোতায়েন আছেন সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে টহল দিচ্ছে পুলিশের সঙ্গে র‍্যাব ও আনসার বাহিনী। খুলনা থেকে আসা নৌবাহিনীর একটি টিমও যুক্ত হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থায়। কারফিউর কারণে স্থানীয় বাস চলাচল বন্ধ ছিল গতকাল।

গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় এক সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি বাংলা। ওই সাংবাদিক বুধবার রাতের শহরের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, শহরের সব দোকানপাট বন্ধ। দু-একটা রিকশা চলছে। রাস্তায় সেভাবে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। কারফিউ জারির পর থেকেই এই অবস্থা।

গোপালগঞ্জ সদর সার্কেল পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও বিবিসি বাংলাকে বলেন, গোপালগঞ্জের ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক, তবে থমথমে। কারফিউ বলবৎ আছে।’ তিনি আরও বলেন, বুধবার সন্ধ্যা থেকেই গোপালগঞ্জে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে এটি পরিচালনা করছে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ২৫

গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী জানান, এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে হামলা-সংঘর্ষের পর যৌথ বাহিনীর অভিযানে ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  বাঘায় জালিয়াতি মামলার তিন আসামিকে রিমান্ডে

এ সময় ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক জানান, এনসিপির পদযাত্রা ঘিরে ঘটে যাওয়া ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি, তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে। যারা দুষ্কৃতকারী রয়েছে, যারা হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।

হামলায় আহত ও নিহত ব্যক্তিদের বিষয়ে ডিআইজি বলেন, হামলার ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪০-৪৫ জন। আহতদের মধ্যে ১০ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।

এদিকে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) যৌথ আয়োজনে ‘যুব উদ্যোক্তা: বিনিয়োগ, নীতি ও ইকোসিস্টেম’ শীর্ষক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো আমার মতে আমি যতটুকু দেখেছি, তারা ভালো ভূমিকা পালন করেছে এবং তারা সফলভাবে সেখান থেকে প্রত্যেককে ইভাকুয়েট করতে পেরেছে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, অস্ত্রশস্ত্রসহ হামলা করেছে, তারা গ্রেপ্তার হবে।’-তথ্যসূত্র : আজকের পত্রিকা

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।