স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে খালের মাটি কম কেটেই কাজ শেষ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে সংস্থার চেয়ারম্যান ড. এম. আসাদুজ্জামানের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ পড়েছে। তবে এখনও অভিযোগের তদন্ত হয়নি।
বিএমডিএর বরেন্দ্র এলাকায় খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প-দ্বিতীয় পর্যায়ের অধীনে এই কাজটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বড়িয়া খাস খালে। ২৭৯ দশমিক ৬০ মিটার খাল সংস্কারের এই কাজটি দেওয়া হয় আইকন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। আইকন ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে কাজটি কিনে নিয়ে করছেন রাজশাহীর হেতেমখাঁ এলাকার ঠিকাদার মো. শাকিব।
নথিপত্রে দেখা গেছে, ২০ লাখ ৫৩ হাজার ৫৯৯ টাকার এ কাজের মধ্যে শুধু মাটি খননের জন্যই বরাদ্দ ১৯ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৫ টাকা। খাল থেকে মোট ১৭ হাজার ৯৯৬ কিউম মাটি খননযন্ত্রের মাধ্যমে তুলে পাড়ে দেওয়ার কথা। প্রতি কিউমের জন্য বরাদ্দ ১১০ টাকা। গত ১০ এপ্রিল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেন প্রকল্প পরিচালক নাজিরুল ইসলাম।
এরপর কাজ শুরু করেন ঠিকাদার শাকিব। ইতোমধ্যে খননের কাজ শেষ করে খননযন্ত্র তুলে নেওয়া হয়েছে খাল থেকে। এখন অভিযোগ উঠেছে যে, ঠিকাদার ১৭ হাজার ৯৯৬ কিউম মাটির বদলে তুলেছেন ১২ হাজার কিউম। অর্থাৎ, প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকার কম মাটি কাটা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (১৩ মে) খাইরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ডাকযোগে বিএমডিএ চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগটি পাঠান। এর একটি কপি পাওয়া গেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, নাচোলের বুড়িয়া খাস খাল নামে পরিচিত এই খালটি সেন্দুর মুচি ব্রিজ সংলগ্ন। ঠিকাদার শাকিব আইউব আলী নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে খালটি খনন করিয়েছেন।
গত ৮ মে খননের কাজ শেষ করেছেন আইউব। খাড়িতে ১৭ হাজার ৯৯৬ কিউম মাটি খননের কথা থাকলেও বিএমডিএর নাচোল উপজেলা জোন অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ১২ হাজার কিউম মাটি খনন করা হয়েছে। এখন বিল করার জন্য ঠিকাদার শাকিব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ফেলেছেন। তাদের কাছে আইউব আলী প্রিয় ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন। কারণ আইউব আলী বরাদ্দের চেয়ে কম মাটি খনন করে কর্মকর্তাদের টাকার বান্ডিল দিয়ে মিষ্টি মুখ করতে পঞ্চমুখ।
অভিযোগে আরও বলা হয়, যেসব খাল খনন করতে প্রায় ৫০ টাকা কিউম খরচ হয় সেসব খাল আইউব আলী ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কিউমের মধ্যে খনন করে দেন। এতে ঠিকাদারদের কাছেও তিনি প্রিয় ব্যক্তি। আইউব আলী খাল খনন করলে কোন কর্মকর্তা তা ভালোভাবে মাপজোখ করেন না। কারণ, কম মাটি খননের জন্য তাদের কাছে যথারীতি হিস্যা অনুযায়ী টাকার বান্ডিল পৌঁছে যায়। কিছু দিন আগে মাটি কম খননের জন্য এক্সচেঞ্জ (নির্বাহী প্রকৌশলী) রফিকুল ইসলাম ও শামসুল ইসলাম প্রতিবাদ করলে ঠিকাদার শাকিব ও আইউব আলী তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন।
যোগাযোগ করা হলে ঠিকাদার মো. শাকিব দাবি করেন, মাটি কম খনন করা হয়নি। কার্যাদেশে যা ছিল, সে অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। খননের কাজে নিয়োজিত থাকা আইউব আলী জানান, পাঁচ-ছয়দিন আগে তিনি খনন শেষ করে স্কেভেটর তুলে নিয়ে এসেছেন।
বিএমডিএর নাচোল জোন কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল ইসলাম বলেন, আগে ছিল খাল, খননের পর এখন সেটা নদী হয়ে গেছে। আমরা ১০০ ভাগ কাজ বুঝিয়ে দিত পারব।
প্রকল্পের পরিচালক বিএমডিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাজিরুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, খাল খননের কাজ প্রায় শেষ। কিছু জায়গায় গাছ আছে, তাই খনন করা যাচ্ছে না।
মাটি কম খননের ব্যাপারে সংস্থার চেয়ারম্যানের কাছে দাখিল হওয়া অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আগামীকাল (বুধবার) আমাদের লোক যাবে। তারা মাপজোখ করবে। যতটুকু মাটি ঠিকাদার কাটবেন, ততটুকুরই বিল পাবেন। বেশি টাকা দেওয়া হবে না।
পরদিন খালে মাপজোখ করা হয়েছে কি না জানতে বুধবার দুপুরেও প্রকল্প পরিচালককে ফোন করা হয়। তখন তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, কম মাটি কেটেছে কি না সেটা আমরা বুঝব। সাংবাদিকদের জবাব দিতে পারব না। মোবাইলে কথাও বলব না। অফিসে আসতে হবে।