নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা শনিবার। সকাল ৭:৪০। ১৭ মে, ২০২৫।

নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না

মে ১৬, ২০২৫ ১০:২৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

অনলাইন ডেস্ক : শুক্রবার (১৬ মে) দুপুরে রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে হাজারো কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, প্রাপ্তবয়স্ক, প্রবীণের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছিলো নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা কর্মসূচী। তাদের সবার কণ্ঠ মিলে গড়ে উঠছিল এক আশ্চর্য সম্মিলন—”নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা”।

“সমতার দাবিতে আমরা”—এই মূল স্লোগানকে ঘিরে গড়ে ওঠা এ আয়োজনে অংশ নেন নারী, শ্রমিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষক, লেখক, ছাত্র, সাংবাদিকসহ সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। নারীর অধিকারের প্রশ্নে এক স্বতঃস্ফূর্ত মিলন-মেলা।

বিকেল ২টা ৪৫ থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ পর্যন্ত চলে এই ব্যতিক্রমী কর্মসূচি চলে। গানের ভাষায়, নাটকের ছলে, দলীয় সঙ্গীতে—প্রতিবাদ, প্রত্যয় আর সম্ভাবনার সুর বাজে। তবে ছিল না কোনো একক বক্তা, ছিল না কোনো নেতা—ছিল কেবল মানুষের ঢল এবং সমতার আহ্বান।

আরও পড়ুনঃ  পরিবর্তনের মানসিকতা নিয়ে চিকিৎসা সেবায় আত্মনিয়োগ করুন: চিকিৎসকদের প্রধান উপদেষ্টা

একটি লাল মঞ্চ, একটি জাগরণ:
কর্মসূচির সূচনা হয় জাতীয় সংগীতে মাধ্যমে। এরপর লাল রঙের অস্থায়ী মঞ্চ থেকে টানা পরিবেশিত হয় প্রতিবাদী গান, নাটিকা, অভিনয় আর নৃত্যগীত। গাওয়া হয় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো সঙ্গীত। “তীর হারা ওই ঢেউয়ের সাগর” আর “কারার ঐ লৌহকপাট” থেকে শুরু করে নানা জাগরণী সুরে মুখর হয় সমগ্র সড়কজুড়ে জনসমুদ্র।

প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর কোথাও থেমে থাকেনি:
এই কর্মসূচি ছিল যেন একটি ক্ষণস্থায়ী বিকল্প সমাজ। একদিনের জন্য হলেও সেই সমাজে ছিল না কোনো ক্ষমতা-কাঠামো, ছিল না দল-মতের বিভাজন।
৩১টি স্পষ্ট স্লোগানে ফুটে ওঠে নারীর অধিকার, মর্যাদা, শ্রমিকের ন্যায্যতা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতার আহ্বান। এমনকি ছিল ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সংহতির বার্তাও।

“আমরা চুপ করবো না”—ঘোষণাপত্র পাঠ:
বিকেল ৫টায় মঞ্চ থেকে পাঠ করা হয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাপত্র। পাঠ করেন শহিদ মামুন মিয়ার স্ত্রী শারমীন আক্তার, জয়ন্তী চাকমা এবং সামসীয়ারা জামান।

আরও পড়ুনঃ  মিশরের সঙ্গে দ্রুত পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তি করা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

তিন ভাগে বিভক্ত ঘোষণাপত্রে বলা হয়, নারীর অধিকার শুধু নারীর নয়—তা একটি ন্যায়-ভিত্তিক সমাজের নির্ণায়ক। যারা ক্ষমতায় আছেন, বা আসবেন, তাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি—নারী, শ্রমিক, হিজড়া, ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার কোনো শর্তাধীন নয়। আরও বলা হয়, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের বিলুপ্তি চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রবল উদ্বেগ রয়েছে। সরকারের নীরবতা আসলে একটি বার্তা—এই দাবি-আন্দোলনকে ভয় দেখিয়ে থামিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে।

ঘৃণা-রাজনীতির বিরুদ্ধে জনস্রোত:
বক্তব্যে উঠে আসে ঘৃণা-বিদ্বেষের রাজনীতির প্রতি উদ্বেগ। তারা বলেন, সংস্কৃতি, ধর্ম ও নারীকে দমনমূলক অস্ত্রে পরিণত করার চেষ্টা করা হলে আমরা তা প্রতিরোধ করব।
সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ছিল একটি কড়া বার্তা দিয়ে তারা বলেন, আপনাদের উপর আমরা নজর রাখছি। তারা আরও বলেন, সংখ্যালঘু নারীদের বাদ দিয়ে কোনো সংস্কার নয়, কোনো গণতন্ত্র নয়।

আরও পড়ুনঃ  রাজশাহীতে ইদ-উল-আজহা উপলক্ষ্যে কোরবানির পশুর হাট ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে মতবিনিময় সভা

চূড়ান্ত দাবি—ভয় না পাওয়ার অঙ্গীকার:

ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত দাবিগুলোর মধ্যে ছিল:
• নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে রাষ্ট্রের কার্যকর ব্যবস্থা
• নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন রক্ষায় দায়িত্বশীল অবস্থান
• নির্বাচনে শতকরা ৩৩ ভাগ নারী প্রার্থী নিশ্চিতকরণ
• শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ও যৌন-প্রজনন অধিকারে নারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ
• ইতিহাস ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য রক্ষায় রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব

কর্মসূচি শেষে বিকাল ৫টা ২২ মিনিটে একটি র‌্যালি বের হয় মঞ্চ থেকে। ফার্মগেট ঘুরে তা শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টা ৩৭ মিনিটে মানিক মিয়ায় ফিরে।-ইত্তেফাক

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।