অনলাইন ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকারের খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, আমাদের একটা পরিকল্পনা আছে। আমরা যতদিন থাকব ততদিন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করব। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব ছেড়ে যাওয়ার আগে যে পরিমাণ খাদ্য মজুত থাকা উচিত এর চেয়ে বেশি ছাড়া কম রেখে যাব না। পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রেখেই আমরা যাব এবং সেভাবেই আমরা পরিকল্পনা সাজাচ্ছি।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে খাদ্য বান্ধব এবং ওএমএস কর্মসূচি বিষয়ক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, এখনো আমাদের প্রায় ১৬ লাখ টন চাল মজুত আছে। গম মজুত আছে প্রায় ১ লাখ টনের মতো। গমবাহী একটি জাহাজ বর্তমানে কুতুবদিয়া বহিঃনোঙ্গরে খালাসের জন্য অপেক্ষমাণ আছে। আমেরিকা এবং রাশিয়া থেকে দুটি জাহাজ আসছে। আমেরিকা থেকে গম কেনার জন্য আরও চুক্তি করা হচ্ছে।
বর্তমানে চালের দাম স্থিতিশীল আছে জানিয়ে উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, এক পর্যায়ে চালের দাম বেড়েছিল, সেটা কমানোর জন্য সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ৫০ লাখ থেকে বাড়িয়ে বর্তমানে ৫৫ লাখ পরিবারকে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। আগে এই কর্মসূচি শুরু হতো সেপ্টেম্বর থেকে ৫ মাস। এখন শুরু হয়েছে আগস্ট থেকে ৬ মাস। এটার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এই মানুষগুলো তো বাজারে চাল কিনতে যাবে না। এতে বাজারে সরবরাহটা বাড়ল এবং দামের উপর প্রভাব পড়বে। আমরা লক্ষ্য করছি সেই প্রভাবটা অলরেডি পড়েছে। দামটা আরও কমলে আমিও খুশি হতাম আপনারাও খুশি হতেন। কিন্তু যারা চাল উৎপাদন করেন তাদের আক্ষেপ আছে, তারা ন্যায্য মূল্যটা পাচ্ছে না। সেদিকটাও আমাদেরকে দেখতে হবে।
নভেম্বরের শেষ দিকে আমন সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে জানিয়ে খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা কিন্তু গত বোরো মৌসুমে আগের বারের চেয়ে দাম ৪ টাকা বাড়িয়েছি। সামনে আমন মৌসুমেও কৃষককে ইনসেনটিভ দেওয়ার জন্য সরকার কাজ করছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় যদি না ঘটে এবং ভালো ফলন যদি হয় আমন মৌসুমে আমরা সর্বোচ্চ পরিমাণে ধান চাল ক্রয় করার চেষ্টা করব। চালটা যাতে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সংগ্রহ করা যায়, সেজন্য আমাদের নীতিমালায় কোন বিচ্যুতি আছে কি না সেটা আমরা পুনরায় বিবেচনা করব।
উদ্বৃত্ত চালের মজুত থাকা সত্ত্বেও সিন্ডিকেটের কাছে বাজার জিম্মি কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অবৈধ মজুত দুই প্রকার হতে পারে। একটা হচ্ছে যদি লাইসেন্স না থাকে, এটাকে ধরা আইনত দায়িত্ব। আরেকটা হচ্ছে লাইসেন্স আছে, কিন্তু তার কতটুকু মজুত করার ক্ষমতা আছে সেটা নির্ধারণ করা আছে। এর বাইরে যদি মজুত করে সেটা ধরাও দায়িত্ব। এ ধরনের বাজার অস্থিতিশীল করার জন্য কেউ যদি অবৈধভাবে মজুত করে আমাদেরকে জানাবেন, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাজারে খাদ্য কিনতে মানুষের ৭০ শতাংশ টাকা ব্যয় হয়ে যাচ্ছে- এক সাংবাদিক এ প্রসঙ্গ তুললে উপদেষ্টা বলেন, প্রকৃতির সঙ্গে উৎপাদনের একটা সম্পর্ক আছে। এবার দেখেন সবজির দাম বেশি, ৮০ টাকার নিচে কিছু নেই। এটার কারণ হচ্ছে এবারের বৃষ্টিটা কিন্তু অনিয়মিতভাবে হচ্ছে। বৃষ্টি হলে কিন্তু সবজি সব নষ্ট হয়ে যায়। এরপরও এখানে প্রশাসনের লোকজন আছেন, যাতে বাজার মনিটরিংটা সঠিকভাবে করা হয়, যাতে সিন্ডিকেট বা চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অজুহাতে দাম বাড়াতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হাসনাত হুমায়ুন কবীর বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।