অনলাইন ডেস্ক : পাকিস্তানের বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে পৃথক তিনটি সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বেলুচিস্তানের কোয়েটায় একটি রাজনৈতিক সমাবেশে আত্মঘাতী বোমা হামলার সন্দেহে বিস্ফোরণে অন্তত ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২ আগস্ট) এক সরকারি কর্মকর্তা হামজা শফাৎ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, ‘সমাবেশ শেষ হওয়ার পর মানুষ যখন বের হচ্ছিল, তখন পার্কিং এলাকায় হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে।’ এ ঘটনায় আরও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে বেলুচিস্তান প্রদেশেই জঙ্গিদের হামলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৯ সদস্য নিহত হয়েছেন বলে এএফপি সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে। হামলার পরপরই সেনাবাহিনী ব্যাপক অভিযান শুরু করে এবং চার দিনের অভিযানে প্রায় ৫০ জন জঙ্গিকে হত্যা করা হয়েছে। ওয়াশুক জেলার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ডজনখানেক জঙ্গি একটি থানা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা চালায় এবং এতে ৯ সেনা নিহত হন। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা আইএসপিআর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ১০ আগস্ট রাতে বেলুচিস্তানের ঝোব জেলায় পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী সামবাজা এলাকায় সেনারা এক অভিযানে তিন জঙ্গিকে হত্যা করে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত চার দিনে ওই এলাকায় মোট ৫০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। আইএসপিআর এ হামলাকারীদের ‘খাওয়ারিজ’ আখ্যা দিয়েছে, যা সাধারণত পাকিস্তান তেহরিক-ই-তালেবান (টিটিপি) সদস্যদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
আইএসপিআর আরও জানিয়েছে, ‘পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী সীমান্ত রক্ষায় এবং শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন ব্যাহত করার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের নভেম্বরে টিটিপির সঙ্গে ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে টিটিপি মূলত খাইবার পাখতুনখোয়ায় নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালাচ্ছে।
এছাড়া ইসলামাবাদ অভিযোগ করছে, ভারত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকে সহযোগিতা করছে এবং আফগানিস্তান তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দিচ্ছে। তবে কাবুল ও নয়াদিল্লি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
চলতি বছরের মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে যায়। দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ চার দিন ধরে একে অপরকে ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও গোলাবর্ষণে আঘাত করে। এতে অন্তত ৭০ জন নিহত হয়। এর আগে, ২২ এপ্রিল ভারতের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর এক হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারান। ভারত ওই ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। তবে ইসলামাবাদ অভিযোগ অস্বীকার করে এবং স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানায়।
পরবর্তীতে মে মাসের শুরুতে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত, ১০ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যস্থতা করে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করান। আন্তর্জাতিক মহল আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা যেকোনো সময় আরও বড় আকার নিতে পারে। সূত্র: আরব নিউজ