অনলাইন ডেস্ক : আগামী শুক্রবার আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে বসছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ওই শীর্ষ বৈঠকে ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের পথ খুঁজে পেতে চেষ্টা করবেন। শুক্রবারের বৈঠকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাজি না হলে ‘খুব কঠোর পরিণতি’ ভোগ করতে হবে—এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বুধবার ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শীর্ষ বৈঠকে তিনি যুদ্ধবিরতি চাইছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ট্রাম্প খুব পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, ইউক্রেনের ভূখণ্ড সংক্রান্ত যে কোনো আলোচনা শুধুমাত্র ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টই করবেন।’
বৈঠকে অংশ নেওয়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, পুতিন আসলে ‘ব্লাফ’ দিচ্ছেন এবং ইউক্রেনের সব ফ্রন্টে চাপ সৃষ্টি করে দেখাতে চাইছেন যে রাশিয়া গোটা ইউক্রেন দখল করতে সক্ষম। তিনি আরও বলেন, পুতিন এমন ভান করছেন যেন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো তার জন্য তেমন কোনো গুরুত্ব বহন করে না। অথচ বাস্তবে এসব নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
ম্যাক্রোঁ বলেন, শুক্রবার পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প তিন পক্ষের (ট্রাম্প-পুতিন-জেলেনস্কি) একটি বৈঠকের চেষ্টা করবেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই বৈঠক ইউরোপের কোনো নিরপেক্ষ দেশে হতে পারে, যা সবার জন্য গ্রহণযোগ্য।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ ইউরোপীয় ও ইউক্রেনীয় নেতাদের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য এই ভার্চ্যুয়াল বৈঠকের আয়োজন করেন। বার্লিনে উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নেওয়া জেলেনস্কির পাশে দাঁড়িয়ে মের্জ বলেন, ‘আলাস্কার আঙ্কোরেজে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে, তবে ইউরোপ ও ইউক্রেনের মৌলিক নিরাপত্তা স্বার্থ অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।’
জেলেনস্কি আগেই সতর্ক করেছেন, রাশিয়ার যুদ্ধ থামানোর কোনো প্রস্তুতির প্রমাণ নেই। তার ভাষায়, ‘রাশিয়াকে সৎভাবে শান্তিতে বাধ্য করতে হবে। প্রতারণা ঠেকাতে আমাদের ও আমাদের অংশীদারদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে।’
যুদ্ধের চতুর্থ বছরে এসে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি দেখতে চান পুতিন যুদ্ধ শেষ করতে সত্যিই আগ্রহী কিনা। তবে ইউরোপীয় মিত্রদের হতাশ করেছেন তিনি, কারণ তার বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে—ইউক্রেনকে কিছু রুশ দখলকৃত ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হতে পারে।
ইউরোপীয় দেশগুলো জোর দিচ্ছে, শান্তি আলোচনা থেকে ইউক্রেনকে বাদ দেওয়া যাবে না। তাদের আশঙ্কা, ইউক্রেন ছাড়া যে কোনো সমঝোতা মস্কোর পক্ষে যাবে। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় স্থলযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া পুতিন যদি ইউক্রেনে জেতে, তবে পরবর্তীতে ইউরোপের অন্য কোনো দেশ তার টার্গেট হতে পারে।
জেলেনস্কি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ডোনেৎস্কের অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ এলাকা থেকেও ইউক্রেন সরে যাবে না। তাঁর মতে, এটি শুধু অসাংবিধানিকই নয়, বরং ভবিষ্যতে রাশিয়ার নতুন আগ্রাসনের পথ তৈরি করবে।
এদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনী পূর্ব পূর্ব ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দোনবাসের গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরোভস্ক ঘিরে অগ্রসর হচ্ছে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই শহর হারালে ইউক্রেনের সরবরাহ ব্যবস্থা গুরুতরভাবে বিঘ্নিত হবে এবং পুতিন শীর্ষ বৈঠকের আগে বড় ধরনের সাফল্য পেয়ে যাবেন।
সূত্র: এনডিটিভি।