নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা শনিবার। বিকাল ৫:৪৩। ১০ মে, ২০২৫।

ফ্রিল্যান্সিং বদলে দিয়েছে খায়রুলের জীবনের গল্প

অক্টোবর ২৫, ২০২৩ ৮:৪৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মীর তোফায়েল হোসেন (রাজশাহী) : অদম্য ইচ্ছা শক্তি দিয়ে জীবনযুদ্ধে জয়ী টগবগে তরুণ খাইরুল ইসলাম জনি। দারিদ্রকে পিছনে ফেলে তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা। দারিদ্রের কষাঘাতে শৈশব থেকে বেড়ে ওঠা এই তরুণ এখন জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সার। স্বল্প আয়ের পরিবারে টানাটানির সংসারে অনাহারে অর্ধাহারে কেটেছে বেশিরভাগ সময়। এর মধ্যেই এমবিএ পাশ করেছেন তিনি। স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হবেন, দেশ ও জাতির সেবা করবেন, কিন্তু তার সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বেকারত্ব আর অভাব অনটনের মধ্যেই বাবা মায়ের ইচ্ছায় বিয়ে করেন তিনি, এরপর সন্তানের বাবা হয়ে অভাবটা যেন আরো বেড়ে বসে তার ওপর।

চারিদিকে অন্ধকার দেখছিলেন তিনি, তখন কী করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না। ইচ্ছে প্রদীপটা নিভু নিভু করছে । এর মধ্যে ’অনলাইনে ইউটিউব ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম করা যায়’ এরকম একটা ভিডিও চোখে পড়ে তার। শেখার প্রচণ্ড ইচ্ছা জাগে। কিন্তু ল্যাপটপ কিনবেন কীভাবে ? রাজশাহী শহরে ১ টা টিউশনির টাকা আর স্ত্রীর জমানো ৮ হাজার টাকাই ছিল তার সম্বল। এরপর অনেক ভেবে চিন্তে মায়ের পাওনা নানা বাড়ির শেষ সম্বল একটি জমি বিক্রি করে তিনি ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে একটা ল্যাপটপ কেনেন !
ঠিক এখান থেকেই শুরু। অতীতের দুঃখ কষ্ট ভুলে এবার মনোযোগ কাজে। প্রতিদিন ১৪-১৫ ঘণ্টা করে ইউটিউব এ ভিডিও দেখতেন হার না মানা এই তরুণ। ইউটিউব ছিল তার একমাত্র ভরসা। ২৩ দিনের মাথায় ফাইবারে একটা ৫ ডলারের ডাটা এন্ট্রির কাজ পেয়ে যান তিনি। এর পর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ৫ ডলার কাজটা জমা দেওয়ার ৪ দিনের মাথায় ফাইভার থেকে ২ টা মেসেজ পান, তার মধ্যে ১ টা ছিল ই-মেইল সংগ্রহের ৫০ ডলারের কাজ। কাজটা করে দেওয়ার পরে বায়ার (৫*) পাঁচতারকা ফিডব্যাক দেয়, এর পর ধীরে ধীরে কাজ পেতে থাকেন তিনি। ছাত্র অবস্থায় ইংরেজি চর্চা থাকায় বায়ারদের সাথে কথা বলা নিয়ে তেমন সমস্যা হতো না তার।

তার জ্ঞানের পরিধি যেহেতু ইউটিউব কেন্দ্রিক তাই ইংলিশ টিউটোরিয়াল দেখে দেখে ফেসবুক মার্কেটিং, গুগল অ্যাডস, ই-মেইল মার্কেটিং এর মত কাজগুলো শিখে নিজের দক্ষতা বাড়াতে থাকেন। আস্তে আস্তে ৪-৫ মাসে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রায় ১০ টি টপিক শিখে ফেলেন খাইরুল। বর্তমানে তারা স্বামী স্ত্রী দুজনেই ফাইভার মার্কেটপ্লেসে ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যাডস এক্সপার্ট ও লেভেল-২ সেলার হিসেবে কাজ করছে । সেই সাথে মার্কেটপ্লেসের বাইরে কাজ করে এখন তিনি মাসে হাজার ডলারের বেশি ইনকাম করছেন । তার এই সাফল্যের পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন তার স্ত্রী ও বাবা-মা। পরিধি বাড়াতে রাজশাহী মহানগরীর বিলসিমলা এলাকায় গড়ে তুলেছেন ফাইভার আউটসোর্সিং ইনস্টিটিউট।

রাজশাহী ফাইভার আউটসোর্সিং ইনস্টিটিউটের ট্রেইনার খাইরুলের স্ত্রী জাফরিয়া ইসলাম জানান, অন লাইনে কাজে মেয়েদের সুযোগ সুবিধার কথা। তিনি বললেন, ২০২১ সালে রাজশাহী মহানগরীর বন্ধগেট বিলসিমলা এলাকায় তারা একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন । যার নাম ফাইভার আউটসোর্সিং ইনস্টিটিউট । যার মাধ্যমে অনেক স্টুডেন্টকে ফ্রিল্যান্সিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং শিখিয়েছেন। প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ও কাজ করছেন। এই ইনস্টিটিউটে এক হাজারের বেশি ফ্রিল্যান্সার তৈরি করেছেন খাইরুল ইসলাম জনি ও তার স্ত্রী জাফরিয়া ইসলাম । তাদের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশ বিদেশের অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সার এখন কাজ করে আয় করছে লাখ লাখ টাকা।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।