অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার সুযোগ নেই, খুনি হাসিনার ফিরে আসার সুযোগ নেই। আসলে একটি কারণেই তারা আসবে—সেটা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর জন্য। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপি উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
সোমবার (২৬ মে) সকাল ১১টায় নীলফামারীর ডোমারে লিফলেট বিতরণ ও পথ-সভায় তিনি এসব মন্তব্য করেন।
খুনি হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হাজারেরও বেশি মায়ের বুক খালি করেছে—এ দাবি করে তিনি বলেন, ওই খুনির বিচার বাংলাদেশে হওয়া উচিত। ওই খুনির বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন তাদের জায়গা থেকে চিন্তা না করে অন্য কারো হাতে দায়িত্ব দিয়ে চলে না যায়। আমরা এই বাংলাদেশে ওই খুনির বিচার দেখতে চাই। আমরা এই বাংলাদেশে যে আশাগুলোকে সামনে রেখে তরুণরা রক্ত দিয়েছে, সেই সিস্টেমগুলোকে সংস্কার করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজেদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে এমন কোনো অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক কথা যেন না বলি। এখন সরকারে যারা আছে, তারা সরাসরি কোনো দলের প্রতিনিধি নন। তারা গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শক্রমে তারা সরকারে জায়গা করে নিয়েছেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন দ্রুত দিতে হবে—এটা কথা হতে পারে না। বরং কথা এটা হওয়া উচিত যে নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু করার জন্য সামগ্রিক প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করে বিচার এবং সংস্কার শেষে নির্বাচন হতে হবে।
বিগত সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন বাণিজ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি আগে এমপিরা টাকা দিয়ে মনোনয়ন কিনত। তারা দলীয় প্রভাবে নির্বাচিত হত এবং জনগণের কথা না ভেবে নেতাদের তোষামোদ করেই সময় কাটাত। কিন্তু জনগণের দিকে খেয়াল করার সময় পেত না। এসব নেতারা নির্বাচনের আগে জনগণের পকেটে ৫০০/১০০০ টাকা ঢুকিয়ে দিয়ে প্ররোচিত করত এবং নির্বাচনের পরে সেবার নামে হাজার হাজার টাকা জনগণের পকেট থেকে নিত। তিনি আগামী নির্বাচনে দল-মত না দেখে ভালো মানুষকে নির্বাচিত করে সামনে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান। ভালো মানুষকে ভালো এবং খারাপ মানুষকে খারাপ বলার মানসিকতা নিয়ে খারাপ মানুষকে ছুঁড়ে ফেলতে হবে। তা না হলে আওয়ামী লীগ আমলের মতো সর্বত্র দুর্নীতি শুরু হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
তিনি নারী সমাজকে জাতির অর্ধেক অংশ উল্লেখ করে ভালো মানুষ নির্বাচনে তাদের সমর্থন আশা করেন। সরকারি অফিসগুলোতে দুর্নীতি রোধে জনসম্মুখে প্রকাশ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, যত বড় আমলা হোক, যদি অন্যায় করে, তবে তারও বিচার দাবি করি।
বিগত সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) রাজনৈতিক ফায়দা তোলার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, অথচ সেটাই দুর্নীতির আখড়া ছিল।
তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ে হাসিনা রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধ্বংস করেছেন, খারাপ ভাষা ব্যবহার করেছেন। কোনো দলের নাম না নিয়েই তিনি বলেন, এখন দেখছি একটি রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতারাও একই ভাষা ব্যবহার করছেন। এটা কোনো রাজনৈতিক ভাষা হতে পারে না। যে ভাষায় এতদিন আপনাদের ওপর জুলুম করা হয়েছে, সেই ভাষার চর্চা এখন শুরু করলে জনগণ তাদের ছুঁড়ে ফেলবে। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, আপনারা যদি ওই সংস্কৃতি অনুসরণ করেন, তবে আপনারাও অন্য কারো দাবার চাল হবেন, কিন্তু এই তরুণ প্রজন্ম সেই সংস্কৃতি আর প্রতিষ্ঠিত হতে দেবে না।
তিনি এসব নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, কথা বলার সময় সাবধানে বলবেন—আপনার ভাষা ঠিক করবে আপনি আমাদের মুরব্বি কিনা, আপনি আমাদের কাছ থেকে শ্রদ্ধা বা সম্মান পাবেন কিনা। আগামীর বাংলাদেশ পারস্পারিক শ্রদ্ধা ও সম্পর্কের বাংলাদেশ। তাই যোগ্য লোককে যোগ্য জায়গায় প্রতিষ্ঠা এবং ভালো মানুষের পাশে থেকে খারাপকে তিরস্কার করার আহ্বান জানান।-ইত্তেফাক