অনলাইন ডেস্ক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি এক্সো ইমেজিং বাংলাদেশে একটি “বিপ্লবী” পোর্টেবল এআই-চালিত আল্ট্রাসাউন্ড ডিভাইস চালু করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। যা দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক্সো ইমেজিং কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইউসুফ হক ও সিইও সন্দীপ আক্কারাজুর নেতৃত্বে এক্সোর প্রতিনিধিরা সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে যুগান্তকারী প্রযুক্তি ও এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন চিকিৎসা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং এক্সোর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ইউসুফ হক বলেন, প্রাথমিকভাবে দেশের শীর্ষস্থানীয় হাসপাতালগুলোতে এ ডিভাইস চালু করা হবে। দীর্ঘমেয়াদে গ্রামীণ ও কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র পর্যন্ত এর ব্যবহার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, “এই ডিভাইসটি বহনযোগ্য এবং অত্যন্ত দক্ষভাবে তৈরি। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও উচ্চমানের ডায়াগনস্টিক সহজলভ্য হবে। এটি বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লব আনবে, বিশেষ করে গ্রামীণ বাংলাদেশের মতো এলাকায়। ডাক্তার ও নার্সরা শিগগিরই এটিকে স্টেথোস্কোপের মতো ব্যবহার করবেন।”
এক্সোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দীপ আক্কারাজু জানান, বাংলাদেশ এশিয়ার প্রথম দেশ যেখানে এই প্রযুক্তি চালু হচ্ছে। বর্তমানে এ ডিভাইসটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই পাওয়া যায়, যেখানে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এর অনুমোদন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা শিগগিরই মেক্সিকো এবং ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে এই প্রযুক্তি চালু করার পরিকল্পনা করছি।”
এআই-চালিত পোর্টেবল আল্ট্রাসাউন্ড ডিভাইসটি হৃদরোগ, যক্ষ্মা, স্তন ক্যান্সার, ফুসফুসের রোগ, থাইরয়েড সমস্যা এবং গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত জটিলতা সহ বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রাথমিক শনাক্তকরণে সহায়তা করতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এটি সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অ্যাক্সেস অর্জনের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। শুনতে বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর মতো মনে হলেও, এআই স্বাস্থ্যসেবায় এক বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে। আমরা জানি, রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু হয়। পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে রোগীরা প্রায়ই আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই প্রযুক্তি রোগীর কাছে রোগ নির্ণয়কে নিয়ে আসবে এবং সেই বোঝা কমাবে।”
ডিভাইসটির বহনযোগ্যতা সম্পর্কে ইউসুফ হক বলেন, “চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীদের কাছে সরাসরি এই যন্ত্র নিয়ে যেতে পারবেন। ফলে দীর্ঘ অপেক্ষা বা ভ্রমণের প্রয়োজন থাকবে না।”
এক্সোর বোর্ড সদস্য এবং ইন্টেল কর্পোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ইশরাক বলেন, “এটি বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। এই ধরনের প্রযুক্তি সেই ব্যবধান দূর করতে সহায়ক হবে।”
“স্তন ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় আক্রান্ত রোগীদের ঘন ঘন স্ক্রিনিং করা প্রয়োজন। এই ডিভাইসটি সেই প্রক্রিয়াটিকে আরও সুবিধাজনক করে তোলে। এটি মূলত পরবর্তী প্রজন্মের স্টেথোস্কোপ- একটি শক্তিশালী হাতিয়ার যা তাৎক্ষণিক, এআই-চালিত ডায়াগনস্টিক অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে” তিনি বলেন।
আক্কারাজু জানান, এক্সো ইতোমধ্যে পরিপূরক সফ্টওয়্যার তৈরি করছে, যা স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জরুরি রোগীদের অগ্রাধিকার দিতে, ফলো-আপ রিমাইন্ডার পাঠাতে এবং রোগী ও চিকিৎসকের মধ্যে যোগাযোগ সহজ করতে সহায়তা করবে।
“এটি টেলিমেডিসিনের পরবর্তী ধাপ” তিনি মন্তব্য করেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সাঈদুর রহমান, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ।-ঢাকা পোস্ট