পবা প্রতিনিধি : রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার বাগধানী উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা ঝুলছে দুই দিন ধরে। আর বিদ্যালয়ের পাশের একটি আমগাছে তাঁর বসার চেয়ার ঝুলিয়ে রাখার ঘটনাটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক মোসা. মঞ্জু মনোয়ারা বিষয়টিকে নিজের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন এবং থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা তাঁকে জোরপূর্বক অফিসকক্ষ থেকে বের করে দেয় এবং কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয়। এই সময় তাঁকে মারধরেরও শিকার হতে হয়। তাঁর চেয়ার প্রথমে একটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়, পরে কে বা কারা সেটি তুলে বিদ্যালয়ের পাশে একটি আমগাছে ঝুলিয়ে রাখে।
মোসা. মঞ্জু মনোয়ারা বলেন, ‘‘বিদ্যালয়ে এসে দেখি তালা এখনো দেওয়া। চেয়ারটিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে নৈশপ্রহরী জানালেন, চেয়ারটি সকাল থেকে আমগাছে ঝুলছে। কারা এটি করেছে, তিনি জানেন না।’’ তাঁর মতে, চেয়ার ঝুলিয়ে একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, যা তাঁকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। স্থানীয় বিএনপির দুটি পক্ষের মধ্যে মতবিরোধের জেরে এই ঘটনার সূত্রপাত বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বাগধানী উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির পদটি অতীতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নওহাটা পৌরসভার মেয়র হাফিজুর রহমানের অধীনে ছিল। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব নেন। চলতি বছরের ৩ মার্চ নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিএনপি সমর্থিত মামুন-অর-রশিদ কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন। তিনি নওহাটা পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের শ্যালক।
এ কমিটিকে মেনে নেয়নি দলের আরেক অংশ, যাদের নেতৃত্বে রয়েছেন পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা নজির। তিনি বিএনপির সাবেক সভাপতি শেখ মো. মকবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ এবং নিজেও একসময় সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
ঘটনার দিন প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে কমিটির সদস্যদের সঙ্গে একটি সভার আয়োজন করেছিলেন, যেখানে রফিকুল ইসলামও যোগ দেওয়ার কথা ছিল। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত সেখানে না গেলেও, সভার আগে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি ও কক্ষের তালাবদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে।
নাজিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, তিনি শুধু কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে সেখানে গিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, তিনি বা তাঁর লোকজন কাউকে মারধর বা ভাঙচুর করেননি।
অন্যদিকে, রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমি উপরের নেতাদের নির্দেশে সেখানে যাইনি। কিন্তু যা হয়েছে তা অনভিপ্রেত। মতপার্থক্য থাকতেই পারে, তবে তা বিদ্যালয়ের পরিবেশে প্রভাব ফেলা উচিত নয়। যারা শিক্ষকের প্রতি এমন আচরণ করেছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।’’
ঘটনাটি প্রশাসনের নজরে এসেছে এবং প্রধান শিক্ষকের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে উত্তেজনা ও উদ্বেগ বিরাজ করছে।