হেলাল উদ্দীন, বাগমারা : ভ্যানচালক ইয়ানুস আলী বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ছেলে আনামুল হককে (৩১) সৌদি আরবে পাঠিয়েছিলেন। আশা ছিল ছেলে অনেক টাকা নিয়ে বাড়িতে ফিরবেন। তবে তা আর হলো না। ছেলে আনামুল হক বাড়িতে ঠিকই ফিরেছেন তবে লাশ হয়ে। এখন ঋণের টাকা নিয়ে আর ছেলের রেখে যাওয়া স্ত্রী-সন্তান নিয়ে উদ্বিগ্ন ইয়ানুস আলী। রোববার দুপুরে আনামুল হকের লাশ গ্রামে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা।
বিদেশ যাওয়ার ১৪দিন পর তিনি গত ১ অক্টোবর আমানুল হক সৌদি আরবের আফিফে সড়ক দুর্ঘনায় নিহত হন। তিনি রাজশাহীর বাগমারার মাড়িয়া ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের ইয়ানুস আলীর ছেলে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১৭ সেপ্টেম্বর আনামুল হক স্থানীয় এক আদম ব্যবসায়ীর মাধ্যমে সৌদি আরবে যান ভ্যানচালক আনামুল হক। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তিনি সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। সৌদি আরবে পৌঁছার পর ‘আলী আবদুল্লাহ আল- মাকরামি কম” নামের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। গত ১ অক্টোবর তিনি সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। লাশের ময়না তদন্তের পর ওই শহরের একটি হাসপাতালের মর্গে সংরক্ষিত ছিল। নিহতের ১৪ দিন পর পরিবার খবর পেয়ে যোগাযোগ করে লাশ দেশে আনে।
নিহত আনামুল হকের বাবা ইয়ানুস আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ঋণপাতি করে ভালোভাবে চলার জন্য বেটাক (ছেলে) বিদেশ পাঠাছিনু। অনেক টাকা লিইয়্যা দেশেত আসবে ভাবছিনু্, এখন সবই চইল্যা গেল। বেটার বউ-ছাওয়ালকে কীভাবে পালবো।’
তিনি জানান, উপজেলার ঝিকড়া ইউনিয়নের ঝাড়গ্রামের আদম ব্যবসায়ী আতিক হোসেনের মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠিয়েছিলেন। প্রথমে কোনো কাজ দেওয়া হয়নি। তিনি (আদম ব্যবসায়ী) আরও এক লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। তবে টাকা দিতে পারেননি।
মৃত্যুর ১৪ দিন পর খবর পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্ত্রী বিলকিস বানু । তিনি জানান, বিদেশ যাওয়ার পর থেকে স্বামীর সঙ্গে কথা হলেও ১৪দিন ধরে কথা না হওয়াতে স্থানীয় আদম ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তবে তাঁর (আদম ব্যবসায়ীর) মুঠোফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। পরে একজন পুলিশ সদস্যের সহযোগিতায় সৌদি আরবে দূতাবাসে যোগাযোগ করে ১৪দিন পর স্বামীর মৃত্যুর খবর জেনেছেন।
রোববার দুপুরে বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। প্রতিবেশী ও স্বজনেরা জানান, নিহত আনামুল হক দেশে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাত। ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সৌদি আরবে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরেছে। তাঁর আট বছরের শিশু ইমতিয়াজ হোসেনকে বাবার লাশের কফিনে কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন স্বজনেরা। তবে সে ভয়ে সেদিকে যাচ্ছিল না।
নিহতের মামা শ্বশুর পুলিশ সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, দূতাবাসে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছেন, গত ১ অক্টোবর গাড়ি উল্টে আনামুল হকসহ আটজন নিহত হয়। এদের মধ্যে মিশর, সুদান, পাকিস্তানের নাগরিক থাকলেও আনামুল হক একাই বাংলাদেশী ছিলেন। পরে তিনি দূতাবাসের মাধ্যমে ওই কোম্পানির (আবদুল্লাহ আল- মাকরামি কম) সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশে আনার ফিরে আনেন।
স্বজনদের অভিযোগ, আদম ব্যবসায়ী আতিকুর রহমানের প্রতি তাঁদের সন্দেহ হচ্ছে। মৃত্যুর পরেও তাঁদের কাছ থেকে আদম ব্যবসায়ী টাকা দাবি করেছিল। এখন পর্যন্ত তাঁর মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে।
এই বিষয়ে মুঠোফোনে ও বাড়িতে গিয়েও আদম ব্যবসায়ী আতিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁর কোনো স্বজনও এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে চাননি।

