অনলাইন ডেস্ক : ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বিলের ভেতর থেকে বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় জহুরুল মুন্সী ওরফে সুলতান জহির (২৫) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১০)।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার (১৮ আগস্ট) ভোরে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার চারালদিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১০ এর একটি দল।
র্যাব-১০ বলছে, জোরপূর্বক সমকামিতার সম্পর্কে বাধ্য করায় ক্ষিপ্ত হয়ে যুবককে হত্যা করেন সুলতান জহির।
সোমবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, গত ১৩ আগস্ট বিকেল ৩টায় মো. রেদুয়ান (২৮) তার ব্যক্তিগত সুজুকি মোটরসাইকেল ও একটি আইফোনসহ বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন।
দিন শেষে ভুক্তভোগী বাসায় না ফেরায় তার মা রাবেয়া বেগম (৪৬) তার ছেলের বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পারেন, রেদুয়ান বিকেল ৪টায় ফুকুরহাটি থেকে ভাঙ্গার দিকে গিয়েছিলেন। সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজির পরও সন্ধান না পেয়ে তিনি ফরিদপুরের সদরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ও ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে নিখোঁজ সংক্রান্ত পোস্ট দেন।
পরে রোববার (১৭ আগস্ট) দুপুরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে রাবেয়া বেগম ভাঙ্গা থানাধীন তুজারপুর ইউনিয়নের চারালদিয়া গ্রামের একটি বিল থেকে পানিতে ভেসে থাকা একটি অজ্ঞাত মরদেহ শনাক্ত করতে গিয়ে নিশ্চিত হন মরদেহটি তার ছেলে রেদুয়ানের। এ ঘটনায় রেদুয়ানের মা বাদী হয়ে ভাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলা নং- ১৬।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আসামি গ্রেপ্তারে পাঠানো পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব-১০ এর একটি দল তথ্যপ্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ সোমবার ভোরে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানা চারালদিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যা মামলার প্রধান আসামি জহুরুল মুন্সী ওরফে সুলতান জহিরকে গ্রেপ্তার করে। জহির ফরিদপুর ভাঙ্গার চারালদিয়ার লুকমান মুন্সীর ছেলে।
অভিযানে আসামির নিজ বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু, ব্যাংকের এটিএম কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মানিব্যাগ, একজোড়া জুতা ও রক্তমাখা জামাকাপড় এবং আসামির তথ্য মতে মাদারীপুরের শিবচর জামেআতুস সুন্নাহ মাদ্রাসা থেকে নিহতের সুজুকি মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার সুলতান জহির স্বীকার করেন, রেদুয়ানের সঙ্গে তার পূর্বে সমকামিতার সম্পর্ক ছিল। পরে সম্পর্কের অবসান ঘটাতে চাইলে রেদুয়ান তাকে বাধ্য করার চেষ্টা করেন। গত ১৩ আগস্ট বিকেলে আসামির নিজ বাড়িতে সমকামিতার সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বাধ্য করেন রেদুয়ান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিকেলে নিজ বাড়িতে রেদুয়ানকে চাকু দিয়ে আঘাত করে জহির হত্যা করেন এবং মৃতদেহটি পাশের বিলে ফেলে দেন।
গত ১৬ আগস্ট রাতে জহির মরদেহের পচা দুর্গন্ধ পেয়ে বিলে যান। তখন ভেসে থাকতে দেখে মরদেহের পেটের সঙ্গে জিআই তার দিয়ে দুটি বালুর বস্তা বেঁধে পাশের বিলে ফেলে দেন।
পরে স্থানীয়রা রোববার (১৭ আগস্ট) দুপুরে খবর দিলে পুলিশ বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। গ্রেপ্তার জহিরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।