স্টাফ রিপোর্টার : এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে টানা বৃষ্টিতে রাজশাহীর হাটে আমের দাম পড়ে গেছে। চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টির পানিতে গাছে দ্রুত আম পেকে যাচ্ছে। ফলে আম নামিয়ে হাটে নিতে হচ্ছে। একদিকে সরবরাহ বেশি, অন্যদিকে ক্রেতা কমে যাওয়ার কারণে দাম পড়ে গেছে।
রাজশাহীতে সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে। এ হাটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বৃষ্টির আগেও যে আম বিক্রি হয়েছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়, সেটাই এখন বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে।
পাইকারি বাজারের মতো একই চিত্র খুচরা বাজারেও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমের মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এই ধরনের বৃষ্টি ফলনের ওপর প্রভাব ফেলে না, বরং বাজারে দাম হ্রাসের প্রবণতা তৈরি করে। এটি ক্রেতাদের জন্য ভাল হলেও চাষিদের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ।
শুক্রবার বানেশ্বর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, গোপালভোগ, হিমসাগর ও বিভিন্ন ধরনের গুটি জাতের আম কেনাবেচা হচ্ছে। হাটে প্রচুর আম উঠেছে। মহাসড়কের ধারে হাট বসায় এলাকায় দীর্ঘ যানজট দেখা দিয়েছে। বানেশ্বর বাজার পার হাতেই গাড়িগুলোকে বেগ পেতে হচ্ছে।
পুঠিয়ার এ হাটে পুঠিয়া ছাড়াও দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট, পবা, মোহনপুর, বাগমারাসহ সব উপজেলার আম ওঠে। বৃষ্টি শুরুর আগে এখানে প্রতি মণ গোপালভোগ আম ২ হাজার থেকে ২ হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। শুক্রবার এই আম বিক্রি হয়েছে দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। হিমসাগর বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা মণ দরে। আর গুটি জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।
বানেশ্বর হাটে আম বিক্রি করতে এসে দুর্গাপুর উপজেলার সাঁয়বাড় গ্রামের হেলাল উদ্দিন বলেন, বৃষ্টি হওয়ায় গাছে আম পেকে যাচ্ছে। তাই গোপালভোগ জাতের পাঁচটি গাছের ৮০ ক্যারেট আম নিয়ে এসেছেন তিনি। হেলাল বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার আমের দাম অনেক কম। গতবারের চেয়ে মণে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কম পাওয়া যাচ্ছে।
আম বিক্রেতা রনি ইসলাম বলেন, ‘এখানে সকাল-বিকেল আমের বাজারদর কম বেশি হয়। বৃষ্টি শুরুর পর থেকেই হাটে প্রচুর আমদানি। সেই তুলনায় ক্রেতা কম। সব আড়ত আমে ভরে গেছে। দুর্যোপূর্ণ আবহাওয়ায় আম ঠিকমতো ঢাকায় পাঠানো যাচ্ছে না। গত বুধবারও ১ হাজার ৮০০ থেকে দুই টাকা মণ দরে গোপালভোগ বিক্রি করেছি। আজ সেই আম দেড় হাজারে নেমে গেছে।’
বানেশ্বর হাটের ইজারাদার রাসেল সরকার বলেন, ‘হাটে এত আমের আমদানি যে রাখার জায়গা নাই। আমের ভ্যান ও ভুটভুটির চাপে সব সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। গতবারের চেয়ে এবার তিনগুণ আম বেশি। ক্রেতা নাই। বৃষ্টির কারণে এটা হয়েছে। তাই একেবারে দাম পড়ে গেছে।’
তবে কৃষি বিভাগ এখনও আশাবাদী। তারা বলছেন, এই ধাক্কা সাময়িক। বৃষ্টি কেটে গেলে দাম আবারও বাড়বে বলে ধারণা করছেন তারা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদন বেশি বলে বাজারে আমের সরবরাহ বেশি। ফলে দাম কিছুটা কমেছে। বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে আমের হাটে। বৃষ্টি কেটে গেলে দাম আবার বাড়বে।’
জেলা প্রশাসন ঘোষিত ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, গত ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম পাড়া শুরু হয়েছে। ২০ মে থেকে নামছে গোপালভোগ। এছাড়া ২৫ মে থেকে রাণীপছন্দ ও লক্ষণভোগ এবং শুক্রবার (৩০ মে) থেকে হিমসাগর নামানো শুরু হয়েছে। ১০ জুন থেকে ব্যানানা ও ল্যাংড়া আম নামানো যাবে। ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি, ৫ জুলাই থেকে বারি-৪, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা এবং ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি আম পাড়া যাবে।
চলতি বছর রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। হেক্টরপ্রতি সম্ভাব্য গড় উৎপাদন ১৩ দশমিক ২৬ টন। মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ টন। এবার শুধু রাজশাহী জেলা থেকে ১ হাজার ৬৯৫ কোটি ৮৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার আম বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।