ফরিদপুর প্রতিনিধি : ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ভাঙ্গায় বিক্ষোভ ও আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) বিষয়টিকে ‘জনগণের আন্দোলন’ আখ্যা দিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিবালয়ে পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছেন।
গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত গেজেটে ফরিদপুর-২ ও ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়। সেখানে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ভাঙ্গার সাধারণ মানুষ সড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত সোমবার জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লা ইসির সিনিয়র সচিবের কাছে একটি চিঠি দেন। তাতে তিনি আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে পুনরায় ফরিদপুর-৪ আসনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পুনর্বিবেচনার আবেদন জানান। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে স্থানীয় মানুষ ক্ষুব্ধ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভকারীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাচন অফিস, ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়।
হাইওয়ে পুলিশের কার্যক্রম প্রায় থমকে গেছে। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রোকিবুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের কোনো টিম সড়কে নেই। আমাদের একটি অ্যাম্বুলেন্স, তিনটি গাড়ি ও সার্জেন্টদের মোটরসাইকেল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন টহল দেওয়ার মতো কোনো যানবাহন নেই, থানার কার্যক্রম স্থবির।’
এদিকে, হামিরদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান একটি ফেসবুক বার্তায় ভাঙ্গাবাসীর পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে পুনরায় ভাঙ্গা উপজেলাসহ ফরিদপুর-৪ আসনে অন্তর্ভুক্ত করা, আটক সব ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া, নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে দেওয়া মামলা প্রত্যাহার, নতুন করে কোনো মামলা না দেওয়া এবং রাতে প্রশাসনের হয়রানি বন্ধ করা।
অপরদিকে গতকালের সহিংস ঘটনার পর এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার বেলা বারোটার দিকে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আইয়ুম মোল্লা জানান গতকাল ফ্যাসিবাদী দোসরা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে যে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর এবং পুলিশ প্রশাসনের কার্যালয় ভাঙচুর হামলা চালিয়েছে তাদের প্রতিরোধ করা হবে। ফ্যাসিবাদের দোসরদের আজ থেকে আর মাঠে নামতে দেওয়া হবে না। কারণ আমরাও ভাঙ্গার দুটি ইউনিয়ন একসঙ্গে থাকার বিষয়ে একমত পোষণ করছি এবং সেটা শান্তিপূর্ণভাবে আমরা কর্মসূচি পালন করব।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভাঙ্গা গোলচত্বর এলাকায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লা বলেন, ভাঙ্গার সংসদীয় আসনের বিষয়ে ইতিমধ্যে উচ্চতর আদালতে রিট হয়েছে এবং আগামী ২১ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, ওই দিন ভালো কিছু পাব। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, দাবিতে ঢাকা-খুলনা এবং ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করা যাবে না। অবরোধ করার উদ্যোগ নিলে আমরা তা প্রতিহত করব।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, ভাঙ্গার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, সকাল থেকে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে এবং কোথাও অবরোধের কোনো খবর তারা পাননি।