নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা মঙ্গলবার। ভোর ৫:০২। ২৪ জুন, ২০২৫।

মাটিতে শুয়ে শতবর্ষী খেলার মাঠ রক্ষার চেষ্টা

জুন ২৪, ২০২৫ ১২:০৫
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর তানোরে শতবর্ষী একটি খেলার মাঠ রক্ষায় জীবনপণ লড়াইয়ে নেমেছেন স্থানীয় ক্রীড়ামোদী মানুষ। ‘জালিয়াতির মাধ্যমে’ মাঠ দখল করে মাদ্রাসার চারতলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলে এর প্রতিবাদে মাঠে শুয়ে পড়েন খেলোয়াড়েরা। সোমবার (২৩ জুন) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত ভেকুর (খনন যন্ত্র) সামনে শুয়ে অবস্থান নিয়ে মাঠ রক্ষার চেষ্টা করেন তারা। বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

মাঠটির নাম গোকুল-মথুরা খেলার মাঠ। এটি রাজশাহীর তানোর উপজেলার মথুরা মৌজায় অবস্থিত। আরএস খতিয়ানে যার জে.এল নম্বর ১৫৩, খতিয়ান নম্বর ৩৮, দাগ নম্বর ৯৩। জমির শ্রেণি হিসেবে স্পষ্টভাবে ‘খেলার মাঠ’ উল্লেখ রয়েছে। পরিমাণ ১ একর ৬ শতাংশ। মালিক হিসেবে লেখা আছে ‘গোকুল-মথুরা ফুটবল ক্লাবের সেক্রেটারি’। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির নাম নেই।

সূত্র জানায়, গোকুল-মথুরা দাখিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ১৯৯৯ সালের ৪ ও ৮ আগস্ট দুটি ভুয়া দান দলিলের মাধ্যমে মোট ৪০ শতাংশ জমির মালিকানা দাবি করে। এর আগেই ১৯৮৩ সালের ৫ জুন গোকুল-মথুরা প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরও ৬৬ শতাংশ জমি নিজেদের নামে দান দলিল করে নেয়। এভাবে অতি গোপনে পুরো মাঠের মালিকানা কাগজপত্রে নিজেদের করে নেয় দুটি প্রতিষ্ঠান।

আরও পড়ুনঃ  নওগাঁয় অটোরিকশা-ভটভটির সংঘর্ষে নিহত ২

তবে খেলার মাঠ নিয়ে ২০০০ সালে প্রণীত ‘মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন’-এর ৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী এই শ্রেণির জমি অন্য কোনোভাবে ব্যবহার বা হস্তান্তর করার সুযোগ নেই।

বর্তমানে গোকুল-মথুরা ফুটবল ক্লাবের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ। তাঁরা জানান, সম্প্রতি জমির খতিয়ান সংগ্রহ করতে গিয়ে জালিয়াতির এই তথ্য জানতে পারেন। দুই প্রতিষ্ঠানের নামে মাঠ খারিজ হওয়ায় বিষয়টি নজরে এনে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন মাঠের বর্তমান সেক্রেটারি হারুন-অর-রশিদ।

আরও পড়ুনঃ  ‘যুদ্ধ নয়, আমরা সিনেমা করছি’

এর আগে ২ জুন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ক্লাবের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারায় মামলা করেন। আদালত প্রতিপক্ষের জবাব না দেওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। গত ১৮ জুন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আদালতে জবাব দেয়। সেখানে মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মো. আবদুল হামিদ স্বীকার করেন, মাঠের ১ একর ৬ শতাংশ জায়গা ভবনের আওতায় পড়ে যাবে।

মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১০ জুলাই। কিন্তু শুনানির আগেই নির্মাণ কাজ শুরুর উদ্যোগ নেয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। ২৩ জুন সকালে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে এলেও স্থানীয়দের বাধায় তা আর সম্ভব হয়নি। খননযন্ত্র দিয়ে মাঠ খনন শুরু করতেই খেলোয়াড়েরা ভেকুর সামনে শুয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে ঠিকাদার ও যন্ত্রপাতি সরিয়ে নেওয়া হয়।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. হোসেন খান জানান, তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে কাজ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন। স্থানীয়দের বাধার কথা পরে জানতে পেরেছেন।

আরও পড়ুনঃ  সমাজে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় আমাদের প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে: ড. মাওলানা কেরামত আলী

এর আগেও মাঠ রক্ষার দাবিতে এলাকাবাসী একাধিক কর্মসূচি পালন করেছেন। গত ১৪ এপ্রিল মাঠে মানববন্ধন হয়, পরদিন তানোর থেকে রাজশাহী জেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে লংমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।

২৫ মে গোকুল-মথুরা ফুটবল ক্লাবের পক্ষে রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলন করে ‘স্বপ্নচারী যুব উন্নয়ন সংস্থা’ ও ‘ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জ (ইয়্যাস)’ নামে দুটি যুব সংগঠন। রোববার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মো. আবদুল হামিদ স্বীকার করেন, ভবন নির্মাণ হলে মাঠের খানিকটা অংশ কাটা পড়বে। তবে সোমবার বিকেলের পর থেকে তিনি ফোন ধরেননি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত সালমানের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা আছে। তদন্ত করে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নেব।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।